নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নির্বাচন মানে বিকল্প থেকে বাছাই করে নেওয়ার প্রক্রিয়া। নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু একটি গোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকতে নির্বাচন নির্বাচন খেলায় মেতেছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনা সভায় এমন মন্তব্যই করেন বক্তারা।
গত মাসে অনুষ্ঠিত ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ, উপস্থাপন ও সার্বিক নির্বাচন মূল্যায়ন তুলে ধরতে বুধবার ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এ সময় তিনি প্রার্থীদের মামলা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রার্থীর ওপর হামলা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন হলো বিকল্প থেকে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা, অধিকার ও সুযোগ। তাই যেখানে বিকল্প থাকে না, সেখানে নির্বাচনও হয় না। তবে বিকল্প হতে হবে যথার্থ। যেমন, সেদ্ধ পানি মিনারেল ওয়াটারের বিকল্প হতে পারে, কারণ দুটোকেই নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু ট্যাপের পানি এর কোনোটিরই বিকল্প নয়, তাই এ ক্ষেত্রে ‘নির্বাচনে’রও সুযোগ থাকে না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটির তথাকথিত নির্বাচনে মেয়র পদে, রূপক অর্থে, সেদ্ধ/মিনারেল ওয়াটারের বিপরীতে ট্যাপের পানি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল, যার ফলে এসব ক্ষেত্রে ভোটারদের সামনে কোনো যথার্থ বিকল্প ছিল না। উপরন্তু বরিশালে সহিংসতার অভিযোগে ইসলামী আন্দোলনের সরে দাঁড়ানোর ফলে সিলেট ও রাজশাহী সিটির নির্বাচন অনেকটা অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমাদের এখানে নির্বাচন হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার স্টাইলে। দেশটির একটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র দখল করে রেখেছে। আমাদের এখানেও একটি গোষ্ঠী রাষ্ট্র দখল করে ফেলেছে। এই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বাইরে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। চায়না, রাশিয়া, ইরান কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতেও কিন্তু নির্বাচন হয়। তবে এই দেশগুলোতে যুগের পর যুগ ধরে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীই নির্বাচিত হচ্ছে। এই দেশগুলোর মতোই আমাদের এখানেও নির্বাচন নির্বাচন খেলা চলছে।’
সুজনের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, ‘দেশে নির্বাচন নির্বাচন খেলা বহুদিন ধরেই চলছে। রাজনীতিবিদদের মুখে উচ্চারিত “খেলা হবে, খেলা হবে” স্লোগান এটিই প্রমাণ করে। আমাদের এই “খেলা” থেকে বেরোতে হবে। না হলে নির্বাচন অর্থবহ হবে না। নির্বাচনকে অর্থবহ করতে হবে। নির্বাচনকে অর্থবহ করে তোলা নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব।’
নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ, উপস্থাপন ও সার্বিক নির্বাচন মূল্যায়ন তুলে ধরে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সাধারণত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট পড়ার হার বেশি থাকে। তবে এবারের নির্বাচনে তেমনটি দেখা যায়নি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে। ড. শাহদীন মালিকের ভাষায় নির্বাচন নির্বাচন খেলা হচ্ছে। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে পুরো জাতি দেখেছে নির্বাচন কমিশন নিষ্ক্রিয় ছিল। এটিও একটা ভূমিকা। যেটি কাঙ্ক্ষিত নয়।’
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ‘যে নির্বাচনে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।’