নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গত ১৮ জুলাই সাভারে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ছাত্র আসহাবুল ইয়ামিন প্রাণ হারান। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সাঁজোয়া যানের ওপরে মুমূর্ষু ইয়ামিনকে ঘোরানো হয়, পরে জীবিত অবস্থায়ই সড়ক বিভাজকে ফেলে দেওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
আজ শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক স্মরণ সভায় সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেছেন ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দীন।
মো. মহিউদ্দীন বলেন, ‘বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, এর থেকে ভারী কোনো বোঝা নেই। আর কোনো বাবা-মা, বোনকে এই নির্মম পরিস্থিতির মুখোমুখি যেন না হতে হয়। কাউকে সাঁজোয়া যান থেকে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য আর যেন দেখতে না হয়। কোনো ইয়ামিনকে যেন পুলিশের ঘৃণার পাত্র হতে না হয়। আগামী দিনে পুলিশ যেন তার সঠিক দায়িত্ব পালন করে।’ এ সময় ইয়ামিনের হত্যার বিচার চাওয়ার পাশাপাশি তাঁকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে এবং বিগত সরকারের আমলে গণতন্ত্রের সংগ্রামে নিহতদের স্মরণে এই সভার আয়োজন করে বিএনপি। সভায় ইয়ামিনের বাবার মতো আরও অনেকের মা, ভাই-বোন ও স্বজনেরাও অশ্রুসিক্ত চোখে তাঁদের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেন।
টাঙ্গাইলে দুই চোখ হারানো হিমেল আহমেদের মা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘৪ আগস্টের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল হিমেল। টাঙ্গাইল শহরের মূল সড়কে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিল সে। মিছিলটি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পৌঁছালে গুলি ছুড়তে শুরু করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সময় মিছিলের সামনে থাকা হিমেলের মাথা ও মুখমণ্ডলে শতাধিক ছররা গুলি লাগে।’
জুলাই হত্যাকাণ্ডে নিহত রিটন চন্দ্র শীলের মা রুবী রাণী শীল বলেন, ‘আমার ছেলে ছাত্রদল করত। সে গেছিল তারেক জিয়ার মিছিলে। তাকে নৃশংসভাবে মারছে। আমি তার উপযুক্ত বিচার আপনাদের কাছে চাই। আমার ছোট ছেলেও গুলি খেয়ে চিকিৎসাধীন। আমার সংসারে আর কেউ নাই। খুনি হাসিনার বিচার আমরা চাই।’
ভাই হারানোর বেদনা নিয়ে সভায় সুমন বলেন, ‘আমরা তিন ভাই। আমার বড় ভাই যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে তখন মারা যায়। তারপর ইমন ভাই ছিল পরিবারের সব। তিনি নিজে পড়তেন এবং আমাদের পড়াতেন। তিনি গুলি লেগে আহত হয়ে ১৮ আগস্ট হাসপাতালে মারা যান। আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে, আমি তার বিচার চাই। আমার ভাইয়ের বিচার যেন আমি এ বাংলায় দেখতে পারি।’