বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের শার্শায় পূর্বশত্রুতার জেরে ইউপি সদস্য হাসান ও তাঁর দলবলের মারধরে আহত মুকুল হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী মারা গেছেন। আজ শুক্রবার ভোরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুকুল হোসেনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে আহত করে ইউপি সদস্য হাসান। এ ঘটনায় হাসানকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন মুকুলের মা ছায়রা খাতুন।
পুলিশ অভিযুক্ত ইউপি সদস্যসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে আবারও হামলার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মুকুলের পরিবার।
জানা যায়, যশোরের ভারত সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার আতঙ্কের একটি গ্রাম কনেদাহ। দুই যুগ আগে এ গ্রামে হত্যার শিকার হন উলাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী। এ হত্যার অভিযোগ এনে আইযুবের লোকজন সন্দেহবসত পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিবেশী বিএনপি কর্মী আব্দুল আজিজকে। বাড়ির উঠানে কবর দেওয়া হয় আজিজের। সেই থেকে শুরু দুই পরিবারের মধ্যে শত্রুতা। তবে অসহায় আজিজের স্ত্রী হাতজোড় করে আইয়ুবের লোকজনের কাছে জীবন ভিক্ষা চেয়ে গ্রামে বসবাস করছিল। এ ঘটনার ২৮ বছর পর ছোট একটা মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউনুচের ছেলে ইউপি সদস্য হাসানের হাতে আবার খুন হলো আজিজের ছেলে মুকুল।
সম্প্রতি একটি সালিসে মুকুলের ভাই বকুল উপস্থিত না হলে ইউপি সদস্য হাসান তাঁর দলবল নিয়ে বকুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হাতুড়িপেটা করে। খবর পেয়ে মুকুল নিজের ভাইকে বাঁচাতে গেলে তাঁরা মুকুলকেও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরে পরিবারের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে যশোর ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হয়ে মারা যান মুকুল।
এদিকে এ হত্যার ঘটনায় পুরো এলাকা থমথম অবস্থা বিরাজ করছে। এতটা ভয়াবহ অবস্থা যে—মুকুলের পরিবার শব্দ করে কান্না করার সাহসও পাচ্ছে না। তবে সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে কান্নায় ভেযে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা অপরাধী চক্রের ক্যাডারদের গ্রেপ্তার এবং শাস্তির দাবি জানান।
মুকুলের মা ছায়রা খাতুন বলেন, ‘সে সময় স্বামী হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। তবে এবার ছেলে খুনের বিচার চাইছি। তাঁদের (আসামি) ভয়ে বাড়ি থাকতেও পারছি না।’
শার্শা উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি আবুল হাসান জহীর বলেন, ‘মুকুলের হত্যার ঘটনা শুনার পর আমি তাঁর পরিবারকে শান্তনা দিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। মুকুলকে যারা খুন করেছে তাঁরা এর আগে মুকুলের বাবা আব্দুল আজিজ, চাচা মুজাম গাজি ও মুজাম গাজীর চাচা নুর ইসলাম মেম্বারকেও হত্যা করেছিল।’
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, মুকুল হত্যায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।