ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের মধুখালীতে কালী প্রতিমায় আগুন দেওয়ার অভিযোগ তুলে দুই নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও এক সদস্যকে নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা-১ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।
অপসরণ করা জনপ্রতিনিধিরা হলেন ডুমাইন ইউপির চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাস।
অপসারণের বিষয়ে গতকাল রোববার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ এপ্রিল ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে দুজন নির্মাণশ্রমিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান ও সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে দিয়ে ইউপির ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় বলে মনে করে সরকার। এই অবস্থায় স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী অপরাধ হওয়ায় শাহ আসাদুজ্জামান ও অজিত কুমারকে নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী শূন্য পদে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘোষণাসংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী সর্বজনীন কালীমন্দিরের প্রতিমার শাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী মন্দিরসংলগ্ন পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণকাজের শ্রমিকদের জড়িত থাকার সন্দেহ করে। পরে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে চার নির্মাণশ্রমিককে মারধর করা হয়। রাতেই দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
শ্রমিকদের আটকে রেখে মারধরের তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে শ্রমিকদের মারধরে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামানকে অংশ নিতে দেখা গেছে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য আত্মগোপন করেন। তাঁদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, ‘মধুখালীর পঞ্চপল্লীর ঘটনায় হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আটজনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় চারজন ও হত্যামামলায় সাতজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ধরতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু এখনো তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’