চট্টগ্রামের হালিশহরে কিশোরীকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত আলমগীর মিয়াকে (৪৯) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত রোববার দুপুরে ওই কিশোরীকে হত্যা করে পালিয়ে যায় আলমগীর। এরপর গতকাল মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আলমগীরের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায়।
র্যাব জানিয়েছে, ধর্ষক আলমগীর এর আগেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। অপরাধ করে তিনি আত্মগোপনে চলে যেত। এই ঘটনার পরও আলমগীর স্ত্রীকে নিয়ে মানিকগঞ্জে এসে আত্মগোপন করে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার আল মঈন জানান, গত রোববার চট্টগ্রামের হালিশহরে স্কুল পড়ুয়া কিশোরীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনা ঘটে। পরদিন এই ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর তাঁকে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে।
খন্দকার মঈন জানান, নিহত কিশোরীরা তিন ভাই বোন। সে সবার ছোট। তার বাবা পেশায় রিকশাচালক ও মা পোশাক কারখানার কর্মী, বড় ভাই একটি ডেকোরেটরের দোকান এবং ছোট ভাই একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে। নিহত ছাত্রী মেধাবী ছাত্রী হওয়া তার পরিবারের আর্থিক সংকটের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনার দিন নিহতের মা পোশাক কারখানায় চলে যান এবং বাবা রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যান। দুপুরে ভুক্তভোগীর মা বাসায় খাবার খেতে আসলে তখন স্কুলের দুই সহপাঠী তাঁর মাকে জানায়, তাঁর মেয়ে প্রাইভেট পড়ার পর স্কুলে যায়নি। এরপর থেকেই ওই কিশোরীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে আলমগীর জানিয়েছে, ঘটনার দিন সকালে নিহত ছাত্রী কোচিং শেষে বাসায় আসে। তখন গ্রেপ্তার আলমগীর কৌশলে ছাত্রীকে তাঁর বাসায় ডেকে নেয়। এরপর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ছাত্রী তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধর্ষণকারীকে বাঁধা দেয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী ধর্ষকের হাতের আঙুলে কামড় দেয় এবং তার বাবা-মাকে জানিয়ে দেবে বলে জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রেপ্তার আলমগীর ছাত্রীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাসার খাটের নিচে রেখে পালিয় যায়। বাসা থেকে বেরিয়ে আলমগীর তাঁর স্ত্রীর যে গার্মেন্টসে কাজ করে সেখানে যায়। ওই সময় তাঁর স্ত্রীকে জানায়, এলাকায় একজনের সঙ্গে মারামারি হয়েছে। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে শহর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
গ্রেপ্তার আলমগীরের বরাত দিয়ে র্যাবের মুখপাত্র জানান, গ্রেপ্তার আলমগীর আগে গার্মেন্টসে কাজ করত। সে দুটি বিয়ে করেছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তিন মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহরে বসবাস শুরু করে। তার স্ত্রীও একজন গার্মেন্টসকর্মী। বর্তমানে আলমগীর বেকার। তাই কাজ না থাকায় বাসায় অবস্থান করত। আগেও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর সে পালিয়ে প্রথমে ধামরাই পরবর্তীতে সাভার, রাজবাড়ী ও সর্বশেষ মানিকগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করে।