সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। যা বহির্বিশ্বে ঠাঁই করে নিচ্ছে। পাট থেকে উৎপাদিত বস্ত্রের পাশাপাশি দখল নিচ্ছে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। যা থেকে দুই শর অধিক পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে এ দেশের উদ্যোক্তা ও কারিগরি শিল্পের হাত থেকে। তবে এসব পণ্যের চাহিদা দেশে কম থাকলেও ব্যাপকভাবে চাহিদা বাড়ছে বিদেশে। ইউরোপসহ অন্তত ৫০টি দেশে যাচ্ছে এসব পাটপণ্য। পাটপণ্য তৈরিকারক উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের পাটের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুর জেলায় ৮ জুন জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী বসে পাটপণ্য মেলা। জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে মেলার উদ্বোধন করেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫টি স্টলে বসে আকর্ষণীয় পাটপণ্যের সমাহার।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, পাট থেকে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, বাস্কেট, মাদুর, বেণি, লন্ড্রি বাস্কেট, পাপস, টিস্যু বক্স, রসই, বিভিন্ন ধরনের শৌখিন সামগ্রীসহ দুই শর অধিক পাটপণ্য। যা রীতিমতো মানুষকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে মেলায় এসে উদ্যোক্তারা আশাহত। তাঁরা বলছেন, পাটপণ্য কেনায় মানুষের আগ্রহ কম। দেশের বাজারের চেয়ে বিদেশে পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
তাঁরা বলছেন, আমেরিকা, কানাডা, চীন, ইতালি, জার্মান, নেদারল্যান্ডস, দুবাইসহ ইউরোপের দেশগুলোতে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব দেশসহ কমপক্ষে ৫০টি দেশে তাঁদের তৈরি পণ্য যাচ্ছে বলে মেলায় আসা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
গত পাঁচ বছর ধরে ফরিদপুর থেকে নিজের তৈরি পাটপণ্য শুধু চীনে পাঠাচ্ছেন আলেয়া জুট প্রোডাক্টস অ্যান্ড হ্যান্ডিক্র্যাফটের উদ্যোক্তা আলেয়া বেগম। এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘দেশের বাইরে ভারতেও পাটপণ্য মেলায় অংশ নিই। কিন্তু সেখানে এর চাহিদা থাকলেও আমাদের দেশে তেমন নেই। ফরিদপুর শহরে একটি দোকানও নিয়েছিলাম, কিন্তু চাহিদা কম থাকায় সেটি ছেড়ে দিয়েছি। তবে আমার তৈরি পণ্য বিদেশে চাহিদা থাকায় প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রচার-প্রচারণা কম থাকায় এসব পণ্য কিনতে মানুষের আগ্রহ কম রয়েছে। এ ছাড়া তারা শুধু দাম শুনেই চলে যায়। কিন্তু আমি কয়েক বছর যাবৎ চীনে প্রায় এক শ ধরনের পণ্য পাঠাচ্ছি। সেখানে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বছরে তিন থেকে চারবার সেখানে আমার পণ্যগুলো বায়ার এসে নিয়ে যায়। তবে অন্য দেশগুলোতে আমার যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় সেখানে দিতে পারছি না। এ জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি।’
মেলায় এসেছিল রাজবাড়ী থেকে এলিট জুট প্রোডাক্ট। তাদের তৈরি পাটপণ্য অন্তত ৩৫টি দেশে যাচ্ছে বলে দাবি করেন। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইয়াছিন খান জানান, তাঁরা মূলত বাইরের দেশের জন্য পণ্য তৈরি করে থাকেন। দেশে চাহিদা কম রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইয়াছিন খান বলেন, ‘আমাদের কারখানায় প্রায় দুই শর অধিক পণ্য তৈরি করে থাকি। এর মধ্যে বাস্কেট, ফ্লোর ম্যাট, ব্যাগ, নার্সারি পটসহ এ জাতীয় পণ্যের অনেক চাহিদা রয়েছে ইউরোপের দেশগুলোতে।’
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা, পরিচিতি আরও বাড়াতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান উদ্যোক্তারা এবং তাঁদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার কথাও জানান।
এ মেলার উদ্বোধনী দিনে ফরিদপুরে পাট খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘পাটপণ্য বিশ্ববাজারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের ছোট ছোট উদ্যোক্তা বিশ্ববাজারে তাদের তৈরি পণ্য রপ্তানি করছে। তাদের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। ইনশাল্লাহ আমরা পাটপণ্যেও বিশ্ববাজার দখল করব।’