নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা দিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়েছে।
আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই চার্জশিট দাখিলের পর মামলা বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের উপত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের দায়ের করা এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের পর সেটা স্বাক্ষর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন। পরে তিনি তিনি সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামান অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তারেক রহমান পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও ক্রোকি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।
আদালতে শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই নিজাম উদ্দিন ফকির তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় দায়ের করা এই মামলায় বলা হয়, মামলার বাদী ও তাঁর বন্ধুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বসে ২৩ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ফোনে ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলেন। এ সময় ‘জিয়াউর রহমানকে জাতির পিতা ঘোষণা দিলেন তারেক রহমান’ শিরোনামে একটি ভিডিও তাঁদের নজরে আসে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে লন্ডনে আয়োজিত এক কর্মিসভায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, ‘তাহলে নেত্রীবৃন্দ, আজ এই সভায় যাঁরা উপস্থিত আছেন, আজ এই সভায় ক্যামেরার মাধ্যমে, প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কি আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি? আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু বাঙালি জাতি না, বাঙালিসহ ৫৫ হাজার ১২৬ বর্গমাইলের মধ্যে যতগুলো জাতি বাস করে—যারা বাংলাদেশি জাতির পরিচয় বহন করে, যারা নিজেদের বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দেয়, সেই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জাতির পিতা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা। আমরা কি আজ সবাই মিলে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারি? তাহলে আজকে থেকে সিদ্ধান্ত হলো, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা।’
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘কর্মিসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশে চলমান স্থিতিশীল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে এমন মনগড়া মিথ্যা তথ্যসংবলিত উদ্ভট যুক্তি দেন। তিনি জাতির পিতাকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করেছেন।’
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ‘তারেক রহমান কর্মিসভায় এই বক্তব্য দিয়েছেন—সেটা সঠিক পাওয়া গেছে। তবে ইউটিউবে কে তারেক রহমানের বক্তব্য আপলোড করেছিলেন, সেই তথ্য বের করা সম্ভব হয়নি।’