চাঁন মিয়ার নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। গুলিস্তানের আশপাশের এলাকায় চুরি-ছিনতাই করাই তার মূল কাজ। চুরি-ছিনতাইকে কেন্দ্র করে একই এলাকার আরেক নামকরা ছিনতাইকারী ল্যাংড়া রাসেলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি হয়। পথের কাঁটা ল্যাংড়া রাসেলকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে চাঁন মিয়া। চরে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেছে নেন এক পাশবিক ঘৃণ্য পথ। নিজের শ্যালিকার ৫ বছরের ছেলে শিশু সানিকে গলা টিপে হত্যা করেন চাঁন মিয়া। হত্যার পর মরদেহ বস্তায় ভরে বঙ্গভবনের পাশের একটি পুলিশ বক্সের সামনে ফেলে আসেন তিনি।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। আজ সকাল সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর পল্টনের বিএনপির পার্টি অফিসের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের ৯ তারিখ রাতে শিশু সানি নিখোঁজ হয়। পরে শিশুটির মা ঝর্ণা বেগম সেদিন রাতে ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে পরদিন সকালে তাঁর দুলাভাই চাঁন মিয়াকে বিষয়টি জানায়। সেদিনই চাঁন মিয়া বঙ্গভবনের পাশের পুলিশ বক্সের সামনে সানির বস্তাবন্দী মরদেহ পাওয়া গেছে বলে তাঁর শ্যালিকাকে জানান।’
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এ বিষয়ে সানির মা ঝর্ণা বেগম চাঁন মিয়ার সহায়তায় ল্যাংড়া রাসেল, পিন্টু, জুয়েল, কালাম, পায়েল ও হীরার নামে পল্টন মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে পল্টন থানা-পুলিশ তদন্ত করে এবং পরবর্তীতে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ তদন্ত শুরু করে।’
ঘটনার আগের দিন রাতে চান মিয়া শিশু সানিকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেলে চাঁন মিয়া ৬০ টাকা দিয়ে একটি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও ৫০ টাকা দিয়ে ৫টি ঘুমের ওষুধ কেনেন। আরেক দোকান থেকে ফ্রুটো জুস কিনে ঘুমের ওষুধ জুসের সঙ্গে মিশান এবং যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটটি নিজে খান। এরপর শিশু সানিকে স্টেডিয়ামের ২ নম্বর ও ৩ নম্বর গেটের মাঝামাঝি ঝর্ণার পাড়ে নিয়ে যায় চাঁন মিয়া। সেখানে নিয়ে সানিকে ঘুমের ওষুধ মেশানো জুস খাওয়ান তিনি। জুসটি খাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে সানি দুর্বল হয়ে পড়লে চান মিয়া সানিকে গুলিস্থান পার্কের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে বিকৃত যৌনাচার করে। এ সময় সানি ব্যথা পেয়ে শরীর মোচড় দিয়ে উঠলে গলা চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে চাঁন মিয়া।’
শিশুটির ময়নাতদন্তে এসবের প্রমাণ পাওয়া গেছে জানিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, তিনি একজন বিকৃত মানসিকতার লোক। বিকৃত যৌনাচারের জন্য শিশুদের ব্যবহার করতেন তিনি। মূলত ল্যাংড়া রাসেলকে খুনের মামলায় ফাঁসানোর জন্যই সানিকে খুন করা হয়। এসব ঘটনা নিজে স্বীকার করেছে চাঁন মিয়া। মৃত্যু নিশ্চিত করার পরও শিশু সানির মরদেহের সঙ্গে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে গেছেন তিনি। পরে নিজেই মরদেহ বস্তাবন্দী করে রাতে পুলিশ বক্সের সামনে ফেলে যায় এবং পরদিন মরদেহ পাওয়ার বিষয়ে সানির মাকে খবর দেওয়ার মিথ্যা নাটক করে। তাঁর বিরুদ্ধে ৩টি মাদক এবং একটি ছিনতাই মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।