নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সাড়ে ১১ বছরের শিশু রিহান শেখ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ভবনের নিচে চাপা পড়ে অন্যদের সঙ্গে তার বাবা মনসুর শেখ ও মা রেহানা বেগম মারা গেছেন। আজ বুধবার সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
মা-বাবার মৃত্যুর পর রিহানের ঠাঁই হয়েছে তাঁর খালু আসাদুল হকের কাছে। সাভারের বড় ওয়ালিয়া এলাকায় খালুর বাড়িতে থেকে সে স্থানীয় ডেইরি ফার্ম উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।
স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রিহান বলে, ‘রানা প্লাজা ধসের কারণে মা-বাবাকে হারাই। আমি তখন ছিলাম মাত্র ছয় মাসের শিশু। মা-বাবা কী, আমি তা বুঝতে পারিনি। যারা আমার সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে, মা-বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করেছে, আমি তাঁদের বিচার চাই।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানায় ৩ হাজার ৫৭৭ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ভবন ধসে মারা যান ১ হাজার ১৩৯ জন শ্রমিক। জীবিত উদ্ধার হওয়া ২ হাজার ৪৩৮ জন শ্রমিকের মধ্যে ৪৩০ জন মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। পা ও হাতে আঘাত পেয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ৬৬২ জন শ্রমিক, ২০৫ জন শ্রমিকের বুকের পাঁজর, ১০৪ জন শ্রমিকের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে, ২৬৮ জন শ্রমিক মানসিকভাবে অসুস্থ এবং ১৮ জন শ্রমিক পরবর্তীতে হাসপাতালে অথবা নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
আজ বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে জড়ো হতে থাকেন। এরপর পর্যায়ক্রমে নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার দাবি জানায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, বাংলাদেশ ও এস কে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু আজও ভয়াবহ এই শ্রমিক হতাহতের ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। হতাহত শ্রমিকেরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শ্রমিক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি ডলি তালুকদার বলেন, ‘যে শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে, আজ তাঁদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। আমরা তা করতে দেব না। শ্রমিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’