জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য পূর্বনির্ধারিত স্থানের ৫৬টি গাছ রাতের আঁধারে কাটা হয়েছে। এতে কাটা গাছে কাফনের কাপড় মুড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার ভোররাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার সুন্দরবন নামক স্থানে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) জন্য নির্ধারিত স্থানে গাছগুলো কাটা হয়েছে।
পরে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের নজরে এলে বেলা সোয়া ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
এ সময় ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের নামফলক ভেঙে ফেলেন ছাত্ররা। পরে সেখানে ‘গাছ কাটলে খবর আছে’ দেয়াল লিখন করা হয়।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বুধবার ভোররাতে ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে এবং গাছগুলোর ডালপালা ফেলে রেখে মূল অংশ ট্রাকে তুলে অন্যত্র নেওয়া হয়েছে। সেই ট্রাকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেট দিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে বের হয়। সে সময় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দুজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন জাহাঙ্গীরনগরে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। তার পরিপ্রেক্ষিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে। অথচ সেটার অপেক্ষা না করে রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।’
রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে কাটা গাছের দায়িত্ব এস্টেট কার্যালয়ের অধীনে থাকবে।
তবে এ বিষয়ে এস্টেট কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান বলেন, ‘নিরাপত্তা শাখার এক কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনেছি, সেখানে গাছ কাটা হয়েছে। গাছ কাটার বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। এ ছাড়া কাটা গাছগুলো আমাদের এখনো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। গাছগুলো কোথায় আছে, তা জানি না।’
এ দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল গেটের দায়িত্বরত আনসার সদস্য মো. সাবিয়ার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে গাছসহ ট্রাকটি বের হয়ে যায়। ট্রাকের সঙ্গে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ ও পলাশ সাহা ছিলেন।’
ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিচালক অধ্যাপক কে এম জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই স্থানে ভবন নির্মাণের জন্য সাবেক উপাচার্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টেন্ডার হয়েছে। যাঁরা কাজ পেয়েছেন, তাঁরা গাছগুলো কেটেছেন। গাছগুলো এস্টেট অফিসকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। গাছগুলো ক্যাম্পাসেই থাকার কথা। কোথায় রাখা আছে, তা জানি না। তবে জেনে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘রাতের আঁধারে গাছ কাটার বিষয়টি আমরা জানি না।’
উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়ে কিছু জানি না। এমনকি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকেও কিছু জানানো হয়নি।’