সেপটিক ট্যাংকে নামতে চায় নাই, হয়তো জোর করে নামানো হইছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিহত মিঠুর ভাই। সাভারের আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানার সেপটিক ট্যাংকে মিঠুসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ট্যাংকে নেমে বিকেল থেকে নিখোঁজ থাকার পরে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
বুধবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আশুলিয়ার শিমুলতলার দরগারপাড় এলাকার আল রহমান নিট ফ্যাশনস (বিডি) লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার সেপটিক ট্যাংক থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন—স্থানীয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার খাগালিয়া গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে মো. মিঠু (২২), খুলনা জেলার বটিয়াঘাট থানার বুনারবাদ গ্রামের নুর ইসলাম শিকদারের ছেলে মো. রাকিব (২২) এবং রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানার ফেরদৌস রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৭)। তাঁরা দুজনেই কারখানার শ্রমিক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার বেলা ৩টার দিকে প্রথমে পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিঠু ওই সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নামেন। ঘণ্টাখানেক পরেও তাঁর কোনো সাড়াশব্দ না পেলে প্রথমে রাকিব ও পরে মোহাম্মদ আলী নামেন। পরে তিনজনেরই কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
নিহত মিঠুর ফুপাতো ভাই নূর আলম বলেন, ‘অফিসের লোক যদি আগেই কাউকে জানাত, তাহলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। অনেক সময় পার হয়ে গেলে তারপর বিষয়টি জানা যায়।’
মিঠুর ছোট ভাই মো. রাকিব বলেন, ‘আমার ভাই বাসায় ছিল, তাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে এসেছিল। সে নামতে চায় নাই, হয়তো ওকে জোর করে নামানো হইছে। আমার ভাই এখানে চাকরি করত না। সে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে বাইরে কাজ করে। ঘটনা কীভাবে ঘটল আমরা এর সত্যতা জানতে চাই।’
নিহত রাকিবের স্ত্রী বৃষ্টি বলেন, ‘রাকিব তো অপারেটর ছিল। সে মেশিন চালায়, সে কীভাবে সেপটিক ট্যাংকে গেল? কেন নামাল তাকে? আমি কী নিয়ে সংসার করব? আমি এর বিচার চাই।’
এদিকে ঘটনার পর থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামীমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক (জোন-৪) মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা তিনজনেরই মরদেহ উদ্ধার করেছি। সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে কার্বন মনো অক্সাইড ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস জমা থাকে। সে জন্য কেউ যদি নামে, সে তাৎক্ষণিক মারা যাবে। এখানেও সে বিষয়টিই ঘটেছে।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত রায় বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্তে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’