তালপাতায় আঁকা গৌতম বুদ্ধের জীবনচক্র। বুদ্ধকে কেউ এঁকেছেন পটচিত্র-রিকশা পেইন্টিংয়ে। তাঁকে পাওয়া গেল মৃৎশিল্পে কিংবা ভাস্কর্যে। এমন নানা মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের ৪২ জন শিল্পীর তুলিতে ফুটে উঠেছে বুদ্ধর দর্শন।
আজ সোমবার ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে ‘জীবনে নির্বাণ অনুসন্ধান: বাংলার বুদ্ধ’ শীর্ষক প্রদর্শনী উদ্বোধনের দিনে এসব চিত্র দেখা যায়। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এই আয়োজন করেছে প্রাচ্য-চিত্রকলা অনুশীলন সংঘ। বুদ্ধকে নিয়ে নিয়মিত বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর এটি দ্বিতীয় পর্ব।
শুধু শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এবারের আয়োজন। আছে নাটক, আলোচনা ও সংগীতানুষ্ঠান। এদিন সন্ধ্যায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের উঠানে ছিল সাধন কমল চৌধুরীর ভাষান্তরিত অশ্ব ঘোষের ‘বুদ্ধচরিত’ অবলম্বনে নাটক ‘নির্বাণ’। লতা সমদ্দারের নির্দেশনায় নাটকটিতে অভিনয় করেছেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী এবং প্রাচ্য-চিত্রকলা অনুশীলন সংঘের সদস্যরা। আগামীকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনও সন্ধ্যায় নাটকের প্রদর্শনী চলবে।
এ ছাড়া মঙ্গলবার বিকেলে রয়েছে প্রাচীন বাংলার পোড়ামাটি ফলক শিল্পে বৌদ্ধ জনজীবন শীর্ষক শিল্পালোচনা। আলোচক থাকবেন ড. নীরু শামসুন্নাহার। পরের দিন বিকেলে থাকবে ভাবনগর ফাউন্ডেশনের বাউল-ফকিরদের অংশগ্রহণে প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধ গান চর্যাপদ পরিবেশন।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের পরিচালক ফ্রাঁসোয়া ঘ্রোঁজো বলেন, ‘আমরা এটা যদি প্রতিবছর করতে পারি তাহলে খুব ভালো হয়। খুবই ধন্যবাদ এই আয়োজনের জন্য।’
বিশেষ অতিথি ভাবনগর সাধু সংঘের সভাপতি বাংলা একাডেমির ডেপুটি ডিরেক্টর সায়মন জাকারিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাচীনতম আত্মপরিচয়ের জায়গা বুদ্ধের দর্শন। আমাদের দুঃখের বিষয় বুদ্ধের সাধনা ও দর্শনজাত শিল্পচর্চা হারিয়ে গেছে। অন্য অনেক দেশে বুদ্ধ দর্শনকে কেন্দ্র করে শিল্পকলা চর্চা হচ্ছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো বুদ্ধের দর্শন নিয়ে যে আয়োজন করা হয়েছে তাঁর জন্য অভিনন্দন জানাই। তবে এবারের আয়োজন ডায়নামিক। কারণ বুদ্ধ দর্শন শুধু চিত্রকলায় সীমাবদ্ধ নয়। গান, নাটকেও চর্চা হয়েছে। আমরা যদি লালনের গান দেখি সেখানে বুদ্ধ দর্শনকে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় আমাদের সাধক লেখক সেই চর্যাপদের কবিরা বুদ্ধ দর্শনকে নিয়ে লিখেছিলেন। আমরা বুদ্ধ দর্শনকে বাংলাদেশের সাধারণ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।’