নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আনন্দের বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবার এসেছে বৈসাবি। পর পর দুই বছর করোনার কারণে বন্ধ থাকার পর এ বছর আবারও রাজধানীতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বৈসাবি। রাজধানীর বেইলি রোডের পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স থেকে আজ মঙ্গলবার র্যালি ও রমনা পার্কের পুকুরে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসবটি উদ্যাপিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থাকা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নাগরিকেরা নতুন রঙিন জামাকাপড় পরে কমপ্লেক্সে জড়ো হতে থাকেন। ব্যান্ড পার্টির বাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরের আগমনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন তাঁরা। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা পাশ কাটিয়ে পরিচিত মুখের দেখা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন তাঁরা। র্যালি শেষে রমনা পার্কের পুকুরে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স থেকে র্যালি শুরুর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম বলেন, ‘গত দুই বছর আয়োজন করতে পারিনি। আশা করি এখন থেকে নিয়মিত আমরা এটা আয়োজন করব। এ বছর আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী ঠিকানা থেকে এই আয়োজন শুরু করতে পেরেছি। আমি কামনা করব, পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় থাকবে এবং সবাই মিলে উন্নত ও টেকসই দেশ গড়ার কাজ করব। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আয়োজনটি পরিপূর্ণ হয়েছে। বৈসাবি কোনো ধর্মীয় বা জাতিগত উৎসব নয়, এই উৎসব সবার।’
উৎসবে আসা কলি চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব অনেক আগে থেকে পালিত হয়ে আসছে। গত দুই বছর করোনায় সীমিতভাবে পালন করতে হয়েছে। এ বছর আবারও সবাই একসঙ্গে পালনের চেষ্টা করছি। কাজের সূত্রে ঢাকায় আসতে হয়। ব্যস্ততায় অনেকেরই যাওয়া হয় না। তাই এখানে যারা আছি, তারা সবাই মিলে পালন করছি। এই দিনে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিই।’
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু ও চাংক্রান উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বিভাগের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ হল থেকে টিএসসি পর্যন্ত র্যালি ও সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেছে। জগন্নাথ হলের পুকুরে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আক্তারুজ্জামান। এর আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বহুত্ববাদী বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো যে পরিমাণ অসাম্প্রদায়িক, সহনশীল ও আদিবাসীবান্ধব হওয়ার কথা ছিল, সে পরিমাণ হয়ে উঠতে পারেনি। যার ফলে পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়লেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা-ক্লাসের কারণে এই উৎসবে অংশ নিতে পারছে না।’ এ সময় তাঁরা উৎসব উপলক্ষে অন্তত ৩ দিন সরকারি ছুটিসহ ৬ দফা দাবি জানান।