অর্থ লুটপাট ও পাচারকারীদের গুলি করে মারার শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। বেসিক ব্যাংকের অর্থ পাচার মামলার আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন শুনানিকালে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন বলেন, ‘পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও মামলায় চার্জশিট দিচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে কারণে বিচারও শেষ হচ্ছে না।’ এ সময় দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘অর্থ পাচারকারীরা জাতির শত্রু। কেন চার্জশিট দিচ্ছেন না? এত বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও এসব মামলার বিচার হবে না? অর্থ লুটপাট ও পাচারের মামলায় সামারি ট্রায়াল হওয়া উচিত। যারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে, তাদের গুলি করার শাস্তি হওয়া উচিত।’
পরে আদালত বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও পাচারের ঘটনায় দায়ের হওয়া সব মামলার সর্বশেষ তথ্য ২১ নভেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পরপরই অনুসন্ধানে নামে দুদক। যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিন দিনে মোট ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ৮২ জন, ব্যাংকার ২৭ ও ভূমি জরিপকারী ১১ জন। তবে ৫৬ মামলার একটির চার্জশিটও হয়নি এখন পর্যন্ত।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট না দেওয়ায় বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের ডেকে এর আগে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের মে মাসের ওই শুনানিতে আদালত দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘কিছু ব্যক্তির কাছে যদি আপনারা মাথা নত করেন, তাহলে এ ধরনের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে লাভ কী? যদি একজন কৃষকের বিরুদ্ধে ৫ হাজার টাকার ঋণের মামলা হতো, তাহলে কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসা হতো। বেসিক ব্যাংকের বেলায় হচ্ছে না কেন?’ এমন প্রশ্ন তোলেন আদালত।