হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে শ্রমিকের শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। সারা শরীরে চিকচিক করছে লাল ধুলো আর ইটের গুঁড়োয়। তবুও ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করছেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের দুটি ইটভাটার নারী শ্রমিকেরা। মে দিবস শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন হলেও তাঁদের বেশির ভাগই জানেন না দিবসটি কী এবং কেন পালন করা হয়।
ময়না বেগম নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘কাজ করলে টাকা আছে, না করলে নাই। আমাগো আবার কীসের দিবস। সংসার চালাতে কাজ করতে হয়।’ তাঁর মতো হরিরামপুরে ইটভাটায় কাজ করা বেশির ভাগ শ্রমিকই মে দিবস বা শ্রম দিবস কী তা তাঁরা বোঝেন না। তাঁরা বোঝেন, এক দিন কাজ না করলেই সংসার চালানো যাবে না। তাঁদের সবার লক্ষ্য একটাই, সারা দিন রোদে পুড়ে-হাড়ভাঙা খাটুনির পর সংসার চালানোর খরচ তোলা। এঁদের কাছে মে দিবস আসে-যায়, কিন্তু তাঁদের কাজের বিরাম নেই।
উপজেলার পিপুলিয়া গ্রামের মেসার্স সততা ব্রিকসের শ্রমিকের কাজ করেন খুশি (২৬) ও মারুফা (২৪)। তাঁদের গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলায়। তাঁরা জানান, ভোরবেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রী মিলে ভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। সর্দারের মাধ্যমে ভাটায় কাজ করেন। এক হাজার ইট নেওয়া হলে ১৪৫ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। স্বামী-স্ত্রী মিলে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পাওয়া যায়। তা দিয়ে কোনো রকমভাবে সংসার চলে।
পান্না বেগমের (৩০) বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায়। তিনি জানান, ১৩০ টাকায় ১ হাজার ইট নেওয়ার কাজ করেন তিনি। ‘শ্রমিক দিবস দিয়া কী করবাম। পেট চালানোই আসল কাজ।’
ভাটার ট্রলিতে করে ইট ক্রেতার বাড়ি পৌঁছে দেয় সজীব মিয়া (১৫)। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার হামিদপুর এলাকায় বাড়ি তার। সে বলে, ‘এক বছর ধরে এই এলাকার গৌতম বাবুর ট্রলিতে ইট ওঠানো ও নামানোর কাজ করি। শ্রমিক দিবস কী জানি না, মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা কামাই। রোজ ২০০ থেকে ৬০০ টাকাও আয় হয়। কাজ থাকলে ভোর পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্তও কাজ করি। তখন বেশি টাকা পাই।’
উপজেলার মেসার্স সততা ব্রিকসের মালিক মোসলেম উদ্দিন খান কুন্নু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মালিকেরা ইট সরানোসহ কাজের জন্য সর্দারের সঙ্গে চুক্তি করে থাকে। সর্দার প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করে। শ্রমিকদের নিয়োগ, মজুরি ও ছুটি সব সর্দারই দেখেন।’