রাজধানীর অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু গতকাল বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে পরিবারের অভিযোগ, কারা ফটক থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের বক্তব্য জানা যায়নি।
রাসু ২৩ বছর কারাগারে ছিলেন। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাসু জামিনে বেলা ১১টায় এই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
এদিকে রাসুর ভাই সাচ্চু শেখ সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাসুর জামিনের বিষয়টি তাঁরা আগেই জানতেন। মুক্তি পাবেন বলে তাঁকে আনতে তাঁরা কাশিমপুর কারাগারের ফটকে সকাল থেকে অবস্থান করছিলেন। রাসু ফটক থেকে বের হয়ে তাঁদের কাছে আসার আগেই ডিবি পুলিশের একটি দল তাঁকে তুলে নিয়ে গেছে। ষাটোর্ধ্ব একজন মানুষকে কোনো কারণ ছাড়া এভাবে কারা ফটক থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া অমানবিক।
জানতে চাইলে জেলার লুৎফর রহমান বলেন, রাসুকে কারা ফটক থেকে কেউ আটক করেছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডিবির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তাঁরা ধরেননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুনের মুক্তির প্রায় তিন মাস পর জামিনে মুক্তি পেলেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম রাসু। মামুনকে গত সোমবার রাতে তেজগাঁওয়ে হত্যার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, একসময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন দ্বন্দ্বের জেরে কারাগারে থেকে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ দুজনই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি।
সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম রাসু ২০০২ সালের ২৯ মে থেকে কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকলেও মালিবাগ, মৌচাক-আনারকলি মার্কেট ও আশপাশের এলাকায় হকার বসানো, মার্কেটের ভেতরে জায়গা দখল করে দোকান তৈরি এবং চাঁদাবাজি চলে তাঁর নামে। রাসুর বাড়ি মৌচাক মার্কেটের পেছনে। শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় সুব্রত বাইনের পরেই রাসুর অবস্থান। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ১৩টি মামলা রয়েছে। রাসুর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ক্যানটিন বয় ছিলেন।
একসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী ফারুক-রশিদদের ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে মিলে অস্ত্রবাজি শুরুর পর তাঁর নাম হয়ে যায় ফ্রিডম রাসু। পরে তিনি যুবদলে যোগ দেন। ২০০২ সালের ২৮ মে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রাসু।
সূত্র জানায়, গত ছয় মাসে দুজন শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অন্তত ৩০ জন সন্ত্রাসী জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁরা আবারও অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আবার তাদের (সন্ত্রাসী) গ্রেপ্তার করব। তারা কোনো অপরাধ করলে ব্যবস্থা নেব।’
তেজগাঁওয়ে গুলির ঘটনায় গ্রেপ্তার নেই। সোমবার রাতে তেজগাঁওয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সন্দেহভাজন দুজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
ঘটনার ছায়া তদন্তকারী একটি সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীরা ভাড়াটে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। টোকাইও রয়েছে তাদের মধ্যে। মামুনের ঘনিষ্ঠ সন্ত্রাসী হিমেল জরুরি বৈঠকের কথা বলে তাঁকে ডেকেছিলেন। হিমেলের কাছে যাওয়ার সময় হামলা হয়। হিমেলকে আটকের চেষ্টা চলছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, দুটি দল অভিযান অব্যাহত রেখেছে।