‘মা, আমার চোখটা কি আর ভালো হইব না?’ প্রতিদিনই মাকে এ প্রশ্ন করে জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারানো ১৫ বছরের কিশোর সাব্বির। অসহায় মা রহিমা বেগম ছেলেকে মিথ্যা আশ্বাস দেন। বলেন, ‘ডাক্তার বলছে বাবা; আস্তে আস্তে চোখ ঠিক হইয়া যাইব।’
‘মিথ্যা কওন পাপ। কিন্তু কী করমু? মা হইয়া পোলারে কেমনে কমু, চোখটা ফিরাইয়া দেওয়ার সাধ্য আমার নাই।’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন পোশাককর্মী মা। পোশাক কারখানায় কাজ করে খুব সামান্য বেতন পান তিনি। আর স্বামী মোহাম্মদ ওহিদ রিকশা-ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন। দুজনের সামান্য আয়ে সংসার চালানোই দায়। ছেলের চোখের উন্নত চিকিৎসার খরচ জোগাবেন কেমন করে?
মোবাইল ফোনে রহিমা বেগম জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের কাজলা এলাকায় থাকেন তাঁরা। সাব্বির বাগেরহাটের ফকিরহাটে নানাবাড়িতে থাকত। গ্রামে থাকলে আজেবাজে মানুষের সঙ্গে মিশে ছেলে খারাপ হয়ে যাবে। তাই গত মে-জুনের দিকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
১৯ জুলাই বিকেলে বাবা ওহিদ মিয়া ব্যবসার জন্য যাত্রাবাড়ীতে সবজি কিনতে যান। বাবাকে সাহায্য করতে তাঁর সঙ্গে যায় সাব্বির। সে সময় শুরু হয় গোলাগুলি। হঠাৎ দেখতে পায় বাবা পাশে নেই। গুলি থেকে বাঁচতে একটা ট্রাকের ভেতরে গিয়ে আশ্রয় নেয় সাব্বির। সেখানে তার চোখে গুলি লাগে। এরপর দুই দিন সাব্বিরের কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। ২১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে পান মা রহিমা বেগম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই মাস চিকিৎসাধীন ছিল সাব্বির। সে সময় চিকিৎসা, ওষুধ-পথ্য ও আনুষঙ্গিক খরচে তিন লাখ টাকা চলে গেছে রহিমার। এরপর নেওয়া হয় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। সেখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা মিলেছে। গত ৬ মাসে সরকার থেকে ১ লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছে সাব্বির।
সাব্বিরের মা রহিমা শুধু চান, তাঁর ছেলেটার চোখে আলো ফিরুক। স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ পাক।