নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেছেন, ‘আমার বড় ভাই পাঁচ বছর এমপি ছিল, সেই বড় ভাইকে ক্রসফায়ারে মারা হয়েছে। ওই সময় শেখ হাসিনার পাশে না থাকলে আমারও সেই অবস্থা হতো। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণভবনে বাধ্য হয়ে ওই বক্তব্য দিয়েছিলাম।’
আজ বুধবার ধানমন্ডি ও যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন শুনানির সময় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে তিনি এ কথা বলেন।
এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। তিনি শুনানিতে বলেন, ‘নজরুল ইসলাম এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের অনেক বড় শিল্পোদ্যোক্তা। তাঁর অধীনে ৫ লাখ লোক কাজ করেন। তিনি এখন জেলে। কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে এসব লোক বেকার হয়ে যাবেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় কোনো অভিযোগ নেই। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না। একজন ব্যবসায়ী মানুষ। সরকার আসে, সরকার যায়। ব্যবসায়ীরা তাঁদের সুবিধার জন্য যা করা দরকার করে। জেলহাজতে থাকাকালে তাঁর হার্টে রিং পরানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে। তাঁকে একাধিক মামলায় আগে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তাঁর শারীরিক যে অবস্থা, রিমান্ডে নেওয়ার মতো কোনো সুযোগ নেই। রিমান্ড বাতিল করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হোক।’
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলেন, ‘এই নজরুল ইসলাম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগিতা করে আসছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থের জোগানদাতা।’
এরপর নজরুল ইসলাম আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, ‘আমি হার্টের রোগী। অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার বড় ভাই পাঁচ বছর এমপি ছিল, সেই বড় ভাইকে ক্রসফায়ারে মারা হয়েছে। ওই সময় শেখ হাসিনার পাশে না থাকলে আমারও সেই অবস্থা হতো। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণভবনে বাধ্য হয়ে ওই বক্তব্য দিয়েছিলাম। আমার রিমান্ড বাতিল করে আমাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ।’
শুনানি শেষে আদালত ২ মামলায় পাঁচ দিন করে দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চিঠি দিলেন ডা. এনামুর রহমান
সাবেক সংসদ সদস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে হাজির করা হয় সাভার থানার সাতটি মামলায়। এর মধ্যে একটিতে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিন।
ডা. এনামকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের হাজতখানা থেকে এজলাসে নেওয়ার সময় আদালতের সিঁড়িতে প্যান্টের বাম পকেট থেকে একটি টিস্যু পেপার বের করেন। টিস্যু পেপারে চিঠি লেখা ছিল বলে জানা গেছে। পেপারটি এক লোকের হাতে দেন। তিনি নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে সটকে পড়েন। জানা গেছে, লোকটির হাতে টিস্যু পেপার দেওয়া হয়েছে, তিনি এনামের ভাই পরিচয় দিয়েছেন। কী বার্তা ছিল ওই চিঠিতে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা এসব কথা জানান।
এদিকে আদালতে কথাও বলেন ডা. এনাম। শুনানিতে ডা. এনামুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহযোগিতা করেছেন এটা মিথ্যা কথা। যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, তখন বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছি। আমি নিজে গিয়েছি। জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে গুলিবিদ্ধ ২৯০ জনকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিয়েছি। ওষুধ, খাবার, অপারেশন করিয়েছি। জরুরি বিভাগ থেকে আহত ৫৭৬ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছি। সব রেকর্ডে আছে। রানা প্লাজার ভবন ধসের সময় সাড়ে ৫ হাজার শ্রমিককে চিকিৎসা দিয়েছি। এনাম মেডিকেল মানবিক হাসপাতাল।
শুনানি শেষে আদালত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাইয়ুম হত্যা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্য দিকে সাভার থানার আরও ছয় মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এনামকে।