নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাজধানীর শ্যামলীতে গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে হত্যার পেছনে পাওনা টাকা ও জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্য ছিল বলে জানিয়েছে র্যাব। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাকির হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁকে টাকা ধার দিয়েছিলেন নিহত শহীদ আনোয়ার। সেই টাকা ফেরত চাওয়াই কাল হয়েছে শহীদের জন্য। তবে হত্যার সঙ্গে জড়িত জাকির হোসেন ও তাঁর সহযোগী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
খন্দকার মঈন জানান, নিহত আনোয়ার হোসেন ১৯৯০-২০০৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে জাকির হোসেনের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে জাকিরের। দিনাজপুরে জমি কেনার সময় জাকির তাঁকে সহযোগিতা করে। জাকির জমির দালালি করে এবং জমির কিছু কাগজ জাকিরের কাছে রয়েছে। জাকিরেরর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হওয়ায় আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন সময় জাকিরকে ১২ লাখ টাকা ধার দেয়।
খন্দকার মঈন বলেন, ‘মূলত ধারের টাকা ফেরত না দিতে এবং দিনাজপুরে আনোয়ার হোসেনের জমিজমা আত্মসাৎ করতেই তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে জাকির।’
র্যাবের মুখপাত্র জানান, অবসরের পর আনোয়ার হোসেন ঢাকায় বসবাস শুরু করলেও ঘনিষ্ঠতার সুবাদে জাকিরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ হতো। এক বছর আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা ঋণ পাইয়ে দিতে আনোয়ারের সহযোগিতা চায়। আনোয়ার তাঁকে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানায়। এটা নিয়েও জাকিরের ক্ষোভ ছিল।
খন্দকার মঈন বলেন, আনোয়ার শহীদকে হত্যার উদ্দেশে জাকির ও সাইফুল গত বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর থেকে ঢাকায় আসে। এরপর তাঁরা কল্যাণপুরের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠে। ওই দিন বিকেলে আনোয়ার শহীদকে ফোন করে জাকির। তাঁরা শ্যামলীতে দেখা করেন। এরপর মিরপুর যান। সেখানে কিছু কেনাকাটা করেন। এরপর সেখান থেকে তাঁরা দুজন শ্যামলীতে আসে।
এরপর আনোয়ার শহীদকে হলিলেন গলিতে নিয়ে যায় জাকির। সেখানে আগে থেকেই ওত পেতে ছিল সাইফুল। জাকির গলিতে যাওয়ার পরই সাইফুলকে চোখের ইশারা দিয়ে আনোয়ার শহীদকে দেখিয়ে দেয়। এরপর সাইফুল তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। ছুরিকাঘাত করার পর জাকির প্রথমে আনোয়ারকে ধরে মাটিতে শুইয়ে দেয়। অন্য পথচারীরা আসার পর সে চলে যায়।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, এরপর সাইফুল ও জাকির কমলাপুর হোটেলে মিলিত হয়। রাত ৮টায় কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুর যাওয়ার টিকিট নেয়। কাউন্টারে এসে দিনাজপুরের এক পরিচিত ব্যক্তি জাকিরকে জানায়, আনোয়ার হোসেন মারা গেছে। তখন জাকির সন্দেহ এড়াতে তার টিকিটের সময় পরিবর্তন করে নয়টায় নেয় এবং আনোয়ার হোসেনকে দেখতে যায়।
উল্লেখ্য, আনোয়ার শহীদ গম গবেষণা কেন্দ্রে ১৯৭৬ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে পরিচালক পদ মর্যাদায় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে তার সর্বশেষ কর্মস্থল জয়দেবপুর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ এবং কোনো সন্তান না থাকায় তিনি তাঁর ছোট বোন ফেরদৌস সুলতানার সঙ্গে কল্যাণপুর থাকতেন। হত্যার পর তাঁর বোন বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলা করেন।