চার মাসেও সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর শ্রমিকেরা। আজ রোববার সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকায় চামড়াশিল্প নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশে এ ক্ষোভ জানান তাঁরা।
এ সময় বক্তারা বলেন, সাভারের চামড়াশিল্প শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১৮ হাজার ১ টাকা ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয় গত বছরের ২৪ নভেম্বর। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ পর্যন্ত মালিকপক্ষের সঙ্গে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে। এমনকি কয়েক ঘণ্টা কিংবা আধা বেলা কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিও পালন করেছেন তাঁরা। কিন্তু ফলাফল শূন্য।
তাঁরা বলেন, ২০ থেকে ৩০ বছর চাকরি করার পরেও বেতন ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। স্বল্প বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকেরা। গেজেট অনুযায়ী বেতন না দিলে ঈদের পরে কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
১৮ বছর ধরে চামড়াশিল্পে চাকরি করছেন মো. আসিফ। বর্তমানে তিনি সালমা ট্যানারিতে ভ্যাকুয়াম মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন, বেতন পান ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা।
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছি। কিন্তু মালিকেরা তাতে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমাদের কারখানায় ৮ হাজার, ১২ হাজার টাকায় মানুষেরা কাজ করছে। আমার কারখানার মালিক বলছে, সবাই দিলে আমিও দেব। কিন্তু সব কারখানাতেই একই কথা বলছে। দেবে কে আসলে?’
৩১ বছর ধরে সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড নামে চামড়া কারখানায় চাকরি করছেন মোস্তফা কাজী নামে এক শ্রমিক। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন হাজারীবাগের লাইন কাটে তখন মালিকেরা বলেছে, আপনাদের এত দিন কিছু দিতে পারি নাই, হেমায়েতপুর গেলে সব পাবেন। হেমায়েতপুর আইসা এত আন্দোলন করতে হয় এটা দুঃখজনক ঘটনা। ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। ৩১ বছর ধরে চাকরি করে বেতন পাই মাত্র ১৬-১৭ হাজার টাকা। এখন শরীরের তো সব শেষ।’
রিলায়েন্স ট্যানারির শ্রমিক প্রতিনিধি ও ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কমিটির সদস্য ঝরনা বেগম বলেন, ‘আমাদের নেতাদের অনেক ধোঁকা দিছে, অনেক টালবাহানা করছে। এই টালবাহানা আমরা মেনে নিতে পারি না। ঈদের পরে এক দিন লাগে, দুই দিন লাগে, সপ্তাহ লাগে, মাস লাগে, বন্ধ কইরা (কারখানা) ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করব।’
সামিরা ট্যানারির শ্রমিক রঞ্জু মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার, মালিক, শ্রমিক মিলে যে মজুরি বোর্ড ঘোষণা করছে, যেই গেজেট হয়েছে, এই গেজেট যদি বাস্তবায়ন হয় তাতেই আমরা সন্তুষ্ট। আমরা ট্যানারি শ্রমিকেরা চাই না একটা ভাঙচুর করি বা আন্দোলন-সংগ্রাম করি। ঈদের আগ পর্যন্ত আমরা ওইভাবেই চলে যাব। আমরা মালিকপক্ষকে সম্মান জানাই, সরকারকেও সম্মান জানাই। আমরা কখনই বিশৃঙ্খলা করতে চাই না। ঈদের পরে নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা রাজপথে থাকব।’
সমাবেশে মালিকদের উদ্দেশ্য করে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি। আমরা ঈদের কথা বিবেচনা করে আপাতত কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। ফয়সালা করার জন্য যুক্তিসংগত কথা বলবেন। আমরা যেমন সম্মান দিয়ে কথা বলি, আমাদেরও সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে। পূর্বের মতো আমরা শিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। যদি সেখানে আপনারা বিঘ্ন ঘটান আমাদের কিছু করার থাকবে না।’
শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঈদের মধ্যে যদি কোনো ফয়সালা না হয়, আপনারা লাগাতার কর্মসূচির কথা বলেছেন, সেটা কিন্তু করতে আমরা বাধ্য হব।’
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২২ মার্চ বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে একটি সভায় মিলিত হন ট্যানারি মালিক ও শ্রমিক পক্ষ। সেই সভাতেও মালিকপক্ষ নিম্নতম মজুরি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।