শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
শিশুকন্যাকে নিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন নাদিরা বেগম। মেয়ে জাকিয়া জান্নাতকে কোলে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন তিনি। টুকরো টুকরো হয়ে যায় নাদিরার শরীর। অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় শিশুটি। কিন্তু ট্রেনের নিচে পরে থেঁতলে যায় বাম হাত। বর্তমানে সে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
শিশু জাকিয়া জান্নাত নেত্রকোনা জেলার দর্গাপুর থানার বারহাট্টা গ্রামের জুয়েল রানার মেয়ে। সে শ্রীপুরের আনসার রোড এলাকায় ভাড়া করা বাসায় বাবা-মার সঙ্গে থাকত।
জান্নাতের দাদা তহিমুদ্দিন জানান, স্থানীয়রা জাকিয়াকে উদ্ধার করে শ্রীপুর হাপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগের ডা. মাহমুদা খাতুন তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। জাকিয়ার চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসেন শ্রীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান বিপু। তাঁর সহায়তায় প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটির হাতের অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জাকিয়ার ক্ষতবিক্ষত হাতটি রক্ষায় সচেষ্ট হন। নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয় তাকে। তৃতীয় দফার অস্ত্রোপচারে পা থেকে মাংস এনে হাতের ক্ষতস্থানে লাগানো হয়।
জাকিয়ার দাদা বলেন, তিনি দিনমজুর। জাকিয়ার বাবা পোশক কারখানায় স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। নাতনিকে নিয়ে দীর্ঘ দিনধরে হাসপাতালে আছেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে। স্বল্প আয় দিয়ে জাকিয়ার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা এখন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বিক্রি করার মতো ভিটেমাটিও নেই তাঁদের। শিশুটিকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হৃদয়বান ও বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান বিপু জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে জাকিয়ার চিকিৎসার জন্য সহায়তা করে আসছেন। পাশাপাশি পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। শিশুটিকে সহায়তার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর সকাল সোয়া ৭টার দিকে নাদিরা বেগম শিশু জাকিয়াকে কোলে নিয়ে বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলসড়রকের শ্রীপুর স্টেশনের উত্তর পাশে কাটাপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে নাদিরা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। বেঁচে যায় শিশু জাকিয়া জান্নাত। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেন স্থানীয়রা।