নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
গাজীপুরে বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে নাশকতাসহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের শনাক্ত করা গেছে। এ মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ইতিমধ্যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে এই ঘটনায় যাঁরা জড়িত তাঁদের নাম প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুতের ঘটনায় করা মামলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়াসহ চার আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলহাস উদ্দিন এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত বাকি তিন আসামি হলেন সাইদুল ইসলাম, জুলকারনাইন হৃদয় ও সোহেল রানা।
আজ সোমবার আদালতে ঢাকা রেলওয়ে থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ মামলায় গ্রেপ্তার শাহানুর আলম মেহেদী হাসান ও জান্নাতুল গতকাল রোববার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলহাস উদ্দিনের আদালতে আসামি শাহনুর আলম, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে আসামি মেহেদী হাসান ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলামের আদালতে আসামি জান্নাতুল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তাঁরা নিজেরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং স্থানীয় নেতারা জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া আসামিরা বিএনপি কর্মী বলে জানা গেছে। তবে কাদের নাম বলেছেন তা তদন্তের স্বার্থে সূত্রটি প্রকাশ করেনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. সালাহউদ্দিন চার আসামির রিমান্ড ও তিন আসামির জবানবন্দি গ্রহণের আবেদনে উল্লেখ করেন, ১১ ডিসেম্বর রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক বিএনপি নেতা হাসান আজমল ভূঁইয়ার বাসায় ২৫-৩০ জন দলীয় নেতা-কর্মী রেললাইনে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর ভোর ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে গাজীপুর জেলাধীন শ্রীপুর উপজেলার প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের বনখরিয়া রেললাইনের চিনাই রেল ব্রিজমুখী ঢাকাগামী রেললাইনের বামপাশের প্রায় ১৭.৫০ ফুট লাইন কেটে স্থানচ্যুত করে ফেলেন।
এতে মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি রেললাইনের ডানে ও বামে পরে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন এবং ১০ জন গুরুতর আহত হন।
এরপর ১৬ ডিসেম্বর অভিযান চালিয়ে হাসান আজমল ভূঁইয়াসহ সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যাঁদের রিমান্ডে আবেদন করা হয়েছিল তাঁদের বিষয়ে বলা হয়েছে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে এই ঘটনায় আরও যাঁরা জড়িত তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
এদিকে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী পরিচালক আশ্রাফুল আলম খান বাদী হয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে নাশকতা করে ট্রেনের যাত্রীদের হত্যা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যাপক ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে বর্ণিত স্থানে প্রায় ২০ ফিট অক্সি-অ্যাসিটিলিন সিলিন্ডার ও এলপিজি সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে রেললাইনটি বিচ্ছিন্ন করে রাখেন। এতে ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে আসলাম নামে এক যাত্রী নিহত হন। আহত হন ৭-৮ জন।