হোম > সারা দেশ > ঢাকা

কালকিনিতে বাবা-ছেলেসহ ৩ হত্যা: অভিযোগ চেয়ারম্যান সুমনের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ইউপি সদস্য আক্তারের পরিবারের চলছে শোকের মাতম। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুরের কালকিনিতে বাবা-ছেলেসহ তিনজন হত্যার ঘটনায় উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ও তাঁর ভাই মশিউর রহমান রাজন ব্যাপারী জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

পুলিশ, স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের ভয়ে আক্তার শিকদার ও তাঁর পরিবারসহ শিকদার বংশের অনেক পরিবার বাসা ভাড়া করে অন্যত্র থাকেন। কেউ বাড়িতে এলে চেয়ারম্যানের লোকজনের ভয়ে আবার পালিয়ে যেতে হতো। গত বৃহস্পতিবার রাতে আক্তার শিকদার, তাঁর চাচা আলা বক্স শিকদার, মোশারফ শিকদার, হেলাল শিকদার, আবুল কালাম শিকদার, দুলাল শিকদার, মামুন শিকদার, আকবর শিকদার, আজাহার ঘরামী, ইসমাইল শিকদার, আজহার হাওলাদারসহ প্রায় ১৫টি ঘরে আগুন, ভাঙচুরসহ ঘরের সব মালামাল লুট করে নিয়ে যান চেয়ারম্যান সুমনের লোকজন।

এ খবর পেয়ে শুক্রবার মেম্বার আক্তার শিকদার তাঁর ছেলে মারুফ শিকদারের বাড়িতে আসেন। এ সংবাদ জানতে পেরে চেয়ারম্যান সুমনের লোকজন শিকদারবাড়িতে হামলা চালায়। পরে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাড়ি থেকে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করেন আক্তার শিকদার ও তাঁর ছেলে মারুফ শিকদার। তাঁদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সকালে পুলিশ একই ইউনিয়নের খাশেরহাট সেতুর নিচ থেকে হাত-পা কাটা ও মুখ থেঁতলানো আক্তার শিকদার ও তাঁর ছেলে মারুফ শিকদারের লাশ উদ্ধার করে। অন্যদিকে পাশের এলাকা খুনেরচরের সিরাজুল ইসলাম চৌকিদারকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। এ সময় আহত হন আরও ১০ জন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের পা কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে তাঁদের নাম জানা যায়নি।

স্থানীয় কোন্দলের জেরে বাঁশগাড়ী ইউপি সদস্য আতাউর রহমান আক্তার শিকদার, তাঁর ছেলে মারুফ শিকদার ও সহযোগী সিরাজুল ইসলাম চৌকিদারকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। দীর্ঘদিন ধরে বাঁশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ও মেম্বার আক্তার শিকদারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এই তিনজন খুন হন বলে স্থানীয় লোকজন ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি। গত শুক্রবার ভোরে কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের ভাদুরী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনার পর থেকে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ভাদুরী ও মধ্যচর এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভয় ও আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব মোতায়েন আছে।

প্রতিবেশী মোশারফ শিকদার (৬২) চেয়ারম্যান সুমনের ভয়ে নিজ বাড়িতে থাকেন না। কালকিনিতে বাসা ভাড়া করে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন। তাঁর বাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কোনো কথা বললে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকেও মেরে ফেলবে। আমি তো কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত না। আমার এক ছেলে বিদেশ থাকে, অন্য ছেলে সিলেটে চাকরি করে। তবুও ভয়ে নিজ বাড়িতে থাকতে পারি না। বাসা ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। এই অত্যাচার কবে শেষ হবে আমি জানি না। এই বয়সেও নিজ বাড়িতে থাকতে পারছি না।’

নিহত আক্তারের চাচা আলা বক্স শিকদার বলেন, ‘আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের ছেলে ও নাতিকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমাদের ঘরের সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। এখন আর ভয় পাই না। এই চেয়ারম্যান সুমন আমাদের মেরে ফেলবে, ফেলুক। তবু এর বিচার চাই। এই অত্যাচার বন্ধ হোক। এখানকার মানুষ একটু শান্তিতে থাকুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর আগে আমার ভাই আবুল বাশারকে ওই চেয়ারম্যান সুমনের লোকজন হত্যা করে লাশ গুম করেছে। ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। এ সময় থানায়ও অভিযোগ দেওয়ার সাহস হয়নি। এখন আবার আমার ভাইয়ের ছেলে ও নাতিকে হত্যা করল। এসব ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিচার চাই।’

নিহত আক্তার শিকদারের বাবা মতিন শিকদার বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর কয়েক দিন আগে সুমন চেয়ারম্যানের লোকজন পুড়িয়ে দেয়, আর সেই পোড়াবাড়ি ঢাকা থেকে দেখতে আসছিল আক্তার আর আমার নাতি মারুফ। তাদের ওপর হামলা করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সুমন ও তার লোকজন। আমার আর কোনো ছেলেও নাই, নাতিও নাই। আমার পুরো বংশ শেষ করে দিল। আমি এদের বিচার চাই।’

অভিযুক্ত বাঁশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁর ভাই রাজন ব্যাপারীকেও পাওয়া যায়নি। তাঁদের ঘর তালাবন্ধ ছিল। এ সময় তাঁদের দুই চাচি সেফালী বেগম ও আফরোজা বেগম বলেন, ‘চেয়ারম্যান সুমন ও তাঁর ভাই রাজন ঢাকাতেই থাকেন। তাঁর মা অসুস্থ হওয়ায় অনেক দিন ধরে ঢাকায় আছেন। তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁরা কীভাবে জড়িত থাকেন। এগুলো মিথ্যা কথা। তাঁরা কেউ জড়িত না।’

এদিকে খুনের ঘটনার মাঠপর্যায়ের তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল মাবুদ। গতকাল শনিবার দুপুরে নিহত তিনজনের বাড়িতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।

অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল মাবুদ বলেন, ঘটনাটিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এভাবে তিনজনকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ফলে হেডকোয়ার্টার থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে বিষয়টি অনুধাবনের জন্য আসা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে সম্ভাব্য খুঁটিনাটি দেখা হচ্ছে। তবে এখানে চেয়ারম্যান সুমন আর মেম্বার আক্তারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা ছিল, বিষয়টি এমনই বোঝা যাচ্ছে। তার পরেও তদন্ত করে স্পষ্ট হওয়া যাবে।

সিটি গ্রুপের ভোজ্যতেলের কারখানা পরিদর্শনে ভোক্তা-অধিকারের কর্মকর্তারা

আন্তকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাইলস্টোন কলেজের সাফল্য

পদ্মা নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার

ব্রির ছয় দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা শুরু

সিরাজদিখানে কুকুরের কামড়ে ৫ শিশুসহ আহত ১৫

সাবেক এমপির নামফলক ভেঙে গণপিটুনি খেলেন শ্রমিক দল নেতা

নাগরপুরে আ.লীগ নেতা কুদরত আলী গ্রেপ্তার

ইসমাইলের মৃত্যু: ডেলটা হেলথ কেয়ারের চিকিৎসকসহ ৫ জন কারাগারে

অতিরিক্ত সচিব সেলিমের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭

মির্জাপুরে রাতের আঁধারে নদীতীরের মাটি কাটায় ২ লাখ টাকা জরিমানা

সেকশন