প্রদর্শনীটি শীতলক্ষ্যাপাড়ের জীবন নিয়ে। শিল্পীরা লক্ষ্যাপাড়ের জীবন, জীবিকা, মানুষ, সভ্যতা ও অর্থনীতির চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন সুনিপুণভাবে। তাঁদের চিত্র এবং ইলাস্ট্রেশন আর্টে নানাভাবে ধরা পড়েছে নদীর দুই পাড়ের চিত্র। নদীর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই সভ্যতার চালচিত্র, বিপন্নতার গল্প নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ‘লক্ষ্যাপাড়ের চিত্রকথা-১’ প্রদর্শনীটি।
শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে উদ্বোধন করা হয় প্রদর্শনীটির। দাগ আর্ট স্টেশনের উদ্যোগে আয়োজিত সাত দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন রফিউর রাব্বি।
উদ্বোধন পর্বের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘এই অঞ্চলে আমাদের সুখ, দুঃখ, কষ্ট—এই বিষয়গুলোকে নিয়ে লক্ষ্যাপাড়ের মানুষের জীবনের যে যন্ত্রণা, তাকে কেন্দ্র করে এ আয়োজন। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলো গড়ে উঠেছিল নদীর অববাহিকায়। চার হাজার বছর আগে শীতলক্ষ্যাপারে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এই জনপদ এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বকে সামনে রেখে শহর গড়ে ওঠার পেছনে শীতলক্ষ্যার বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। অথচ আমরা সভ্যতার নামে শীতলক্ষ্যাকে ধ্বংস করেছি। আমাদের জীববৈচিত্র্য ও জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছি। শিল্প ও চিত্রের মধ্য দিয়ে দাগ এই বিষয়টি তুলে ধরতে চাইছে। আমি এই কার্যক্রমের শুভ কামনা করছি এবং আশা করছি এই প্রদর্শনী থেকে আমাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠবে।’
প্রদর্শনী গ্যালারিতে কথা হয় দাগ আর্ট স্টেশনের শিল্পী মুনতাসীর মঈনের সঙ্গে। তিনি এই প্রদর্শনীতে নারায়ণগঞ্জের খ্যাতিমান প্রয়াত ব্যক্তিত্বদের পোর্ট্রেট তৈরি করেছেন। প্রদর্শনী সম্পর্কে মুনতাসীর মঈন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে এমন একটি শহর, যার চারদিকে নদী। এ জন্য নদীর সঙ্গে এই শহরের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আমাদের জীবনযাপনে নদীর প্রভাব এখনো আছে। সেখান থেকেই আমাদের থিম নেওয়া হয়েছে ‘লক্ষ্যাপাড়ের কথা’। আমরা এখানে ৯ জন শিল্পী ও চারুকলার ৯ জন শিক্ষার্থী মিলে এই প্রদর্শনীটি দাঁড় করিয়েছি। আমার কাজ ছিল নারায়ণগঞ্জবাসী যাদের নাম গর্ব করে বলতে পারে, তাঁদের পোর্ট্রেট তৈরি করা। কিছু মিথ নিয়ে কাজ হয়েছে, হাশেম ফুডের নির্মম ঘটনাটি তুলে ধরেছি আমরা। শুধু আকর্ষণীয় গল্প নয়, এখানে লঞ্চ দুর্ঘটনা কিংবা অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়ংকর গল্পও উঠে এসেছে। এ ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এ প্রদর্শনীতে। আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে—সবকিছু মিলিয়েই নারায়ণগঞ্জ। এখানে মানুষ সব ধরনের অভিজ্ঞতাই পাবেন। শহরটি বেশ ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় মানুষের আনাগোনা প্রচুর। আমরা যে মেসেজ দিতে চাই তা হলো, এই শহর, এই নদীকে যদি আরেকটু গোছানো ও দূষণমুক্ত রাখা যেত, তাহলে শহরটা মানুষের জন্য আরও বাসযোগ্য হয়ে উঠত।’
গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন শিল্পীরা। গ্যালারির প্রবেশপথেই দেখা মেলে মাথার ওপর ঝুলে রয়েছে রশি ছেঁড়া জগদ্দল পাথর। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের পোর্ট্রেট, ঐতিহ্য ও নদীবেষ্টিত এলাকার স্থিরচিত্র, নদীদূষণ ও লঞ্চ দুর্ঘটনার শিল্পকর্ম, নকশিকাঁথায় এই শহরের সভ্যতার চিত্র, দরিদ্র মানুষের ওপর ভর করে থাকা করপোরেট মালিকের ভাস্কর্য ইত্যাদি। তবে এই প্রদর্শনীটিতে সবচেয়ে নজর কেড়েছে ‘এই শহরে’ নামক একটি কেরুবোর্ডের কাজ। যেখানে নারায়ণগঞ্জের আদি সভ্যতাকে নিচে রেখে ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠা চার দেয়ালের দালানের আকাশ ছোঁয়ার বাসনাকে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া হাশেম ফুডের অগ্নিকাণ্ড, শ্রমিকশ্রেণির লড়াই-সংগ্রামও তুলে ধরেছেন শিল্পীরা।
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পীরা হলেন শহীদ আহম্মেদ মিঠু, খন্দকার নাসির আহমেদ, অমল আকাশ, রঞ্জিত কর্মকার, মুনতাসীর মঈন, লিটন সরকার, বদরুল আলম ইমন, সুমনা আক্তার, সজীব ঘোষ, সজীব মণ্ডল, শিবশংকর মণ্ডল, তামান্না লিজা, সানন্দা, মেইবু অং মারমা, সুমিত দাস, নূর মোহাম্মদ শান্ত ও দীপা পোদ্দার।