Ajker Patrika
হোম > সারা দেশ > ঢাকা

শ্রীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  

শ্রীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
শ্রীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বন বিভাগের দুটি রেঞ্জের প্রায় ৩৩ হাজার একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ আগুনে পুড়ছে। প্রতিবছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে হুমকিতে পড়েছে বনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।

সচেতন মহলের ধারণা, আগুন দেওয়ার পেছনে দখলদারদের যোগসাজশ রয়েছে। তবে বনে আগুন লাগার কয়েকটি ঘটনাকে সামনে রেখে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঘুরে দেখা গেছে, শ্রীপুর রেঞ্জের সদর বিট অফিসের অধীনে গাজিয়ারণ গ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিশাল এলাকায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। বনের পাখিগুলো এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে। সাতখামাইর বিটের পোষাদিয়া এলাকার বরমী নয়নপুর আঞ্চলিক সড়কের পুরোটা জুড়েই সংরক্ষিত বনাঞ্চল। রাস্তার দুই পাশে তাকালে শুধুই আগুনের ক্ষত।

যত দূর চোখ যায়, শুধুই বনাঞ্চল পোড়ার দৃশ্য। আগুনে শাল-গজারি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের লতাপাতা, গুল্ম, বাঁশ ও বেত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। উপজেলা সাইটালিয়া গ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ছোট ছোট গজারি কপিজ গাছের সঙ্গে বড় বড় গজারি গাছও আগুনের ভয়াবহতা থেকে বাদ যায়নি। শিমলাপাড়া বিটের বেশির ভাগ সংরক্ষিত বনাঞ্চল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

বাদ পড়েনি বন বিটের কার্যালয়ে আশপাশের বনাঞ্চল। রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের আট হাজার একর বনাঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ আগুনে পুড়ে গেছে। কয়েক দফা আগুনে পুড়ে গেছে বনের সমস্ত গাছপালা। ভিটিপাড়া এলাকায় দেখা যায় বিশাল একটি অংশে আগুন জ্বলছে। আগুনে সংরক্ষিত বনের ভেতর বাস করা বানরগুলো গভীর জঙ্গল থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে চলে আসছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘কে আগুন দেয়, আমরা বলতে পারব না। হঠাৎ করে দেখি বনে আগুন জ্বলছে। বনকর্মীদের খবর দিলে তাঁরা আসেন। ততক্ষণে আগুন বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আগুন নেভানো সম্ভব হয় না।’

গাজিয়ারণ গ্রামের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন ফকির বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বনে আগুন জ্বলছে। একের কে একর বনাঞ্চল পুড়ে যাচ্ছে। বনকর্মীরা কয় জায়গায় যাবে আগুন নেভাতে। চারপাশে আগুন। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জ্বলে। আগুন কারা দেয় আমরা কী করে বলব।’

শ্রীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পোষাইদ গ্রামের বাসিন্দা নয়ন মিয়া বলেন, ‘আমাদের আশপাশে ঘন বন। বিশাল এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এক রাতে সব পুড়ে ছাই। সন্ধ্যা থেকে রাতভর আগুন জ্বলছে। সকালে এসে দেখি আগুনে সমস্ত বনাঞ্চল পুড়ে গেছে। কোনো সময় বনকর্মীদের আগুন নেভাতে আসতে দেখি নাই।’

বদনীভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। রয়েছে ঘন শাল গজারি বন। কিন্তু ফাল্গুন-চৈত্র মাস এলেই বনে আগুন জ্বলতে থাকে। যত দূর চোখ যায় শুধুই আগুনে পোড়া বন। আমরা বনাঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে চেষ্টা করি। হঠাৎ করে দেখি বনে আগুন জ্বলছে। কে বা কাহারা আগুন দেয়, আমরা জানি না। এ পর্যন্ত আগুনের রহস্য কেউ উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি।’

শ্রীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাঈদ চৌধুরী নামে এক পরিবেশবাদী বলেন, ‘নির্বিকার সবাই দেখছে বন পুড়ছে। কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁদের তো কিছু করতে দেখছি না। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, বনাঞ্চলে আগুন দেওয়া বন্ধে টাস্কফোর্স গঠন করুন। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুলে ও বাজারে আগুন দেওয়া বন্ধে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়ান। আমরা মনে করি, একটি মহল বনভূমি জবরদখল করতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল পুড়ে সাবাড় করছে।’

ভাওয়ালগড় বাঁচাও আন্দোলনের মহাসচিব ড. এ কে এম রিপন আনসারী বলেন, ‘বনাঞ্চল তো প্রতিবছর আগুনে পুড়ে। এত বছর ধরে পুড়ছে, কই কোনো রহস্য তো উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাহলে আমরা ধরে নেব এর পেছনে তাদেরও হাত রয়েছে। প্রকৃত বন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে তাদের শক্ত অবস্থান চোখে পড়েনি। বনে কারা আগুন দেয়? এটা এখনো শনাক্ত করতে পারেনি। তাহলে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাদের কাজ কী?’

শ্রীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বনে আগুন দেওয়ার পেছনে মাদকসেবীরা জড়িত। মাদক সেবনের জন্য মাদকসেবীরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে বেছে নেন। মাদক সেবনের সময় ওরা আগুন ব্যবহার করে, আর এ থেকে বেশির ভাগ বনে আগুন জ্বলে। এ ছাড়া বনের গজারি কপিজ গাছের লাকড়ি সংগ্রহ করতে একদল বনে আগুন দেয়। আগুন দিয়ে বন পুড়িয়ে গজারি কপিজ গাছ কেটে নেন। এ ধরনের প্রমাণ আমরা হাতেনাতে পেয়েছি। বনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগুন দেওয়ার পেছনে দখলদারদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। বনের ভেতর আগুন লাগলে নেভানো খুবই কঠিন। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। রহস্য উদ্‌ঘাটনে আমরা কাজ করছি।’

ম্যাচিং পোশাকের চাহিদা

ডেমরা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, আহত ২

শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনায় চিঠি দেওয়া উপসচিব ওএসডি

স্টেশন ও টার্মিনালে বাড়ছে যাত্রীর চাপ

পল্লবীতে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে বৃদ্ধা নিহত

খিলক্ষেতে গণপিটুনির শিকার সেই কিশোর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেল

সিগারেটের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯ টাকা করার দাবি

পল্লবীতে বহুতল ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুই ইউনিট

দিয়াবাড়ীতে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জিএমের রক্তাক্ত মরদেহ

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বরকতউল্লা খালাস