বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া শেষ করে বাবার কষ্ট ঘোচাবে, আদরের ছোট বোনসহ বাবা-মাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না ২১ বছরের তরুণ সাগর আহম্মেদের। গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে নিহত হন মো. সাগর আহম্মেদ। সরকারি বাংলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন সাগর।
সন্তানের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এভাবেই কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলতে থাকেন সাগরের বাবা। সাগরের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘আমার মনি আমাকে বলত আর কত টাকা নেব তোমার কাছ থেকে? আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়া সে খুব কষ্ট পেত। আমার কষ্ট হবে বিধায় ছেলে আমার কথা ভেবে হোটেলে চাকরি পর্যন্ত করেছে। আমার সব স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার জীবনে আর কিছুই বাকি নাই। সাগর কাউকে ওয়াদা দিলে সেটা পালন করত। মানবিক কাজ করত। হোটেলে কাজ করাকালীন সেখানে বেঁচে যাওয়া খাবার নিয়ে অসহায়দের বিলিয়ে দিত।’
তোফাজ্জেল হোসেন আরও বলেন, ‘সাগরের ইচ্ছা ছিল বিসিএস দেওয়ার। ঘুষ না দিয়ে চাকরি করার ও চাকরি জীবনে ঘুষ লেনদেন না করার। কত স্বপ্ন দেখত ছেলেটা আমার। আজ সেই স্বপ্ন স্বপ্নই হয়ে গেল। আমার কাছে আমার বাবা সবশেষ কথা বলেছিল শুক্রবার আসরের নামাজের পর। টাকা চেয়েছিল সাগর। আমি টাকা পাঠিয়ে দিয়ে কল দিলে আর ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। নম্বরটি বন্ধ পাই।’
সাগরের মা গোলাপী বেগম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে সকলের জন্য দোয়া চেয়েছে আমার বাজান। বাসার আশপাশে অনেক মানুষ মারা গেছে জানিয়ে সেই মানুষগুলোর জন্যও দোয়া চেয়েছে। কে জানত ওদের জন্য দোয়া চেয়ে আমার ছেলেটায় চলে যাবে?’
নিহতের চাচাতো ভাই মো. সাইফুল হোসেন বলেন, ‘আমি আর সাগর একসঙ্গে থাকতাম। আমি তাকে অনেকবার নিষেধ করার পরেও শুক্রবার সকালে বন্ধুদের সঙ্গে মিরপুর-১০–এ কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলে যায়। পরে কেউ একজন জানায়, সাগরের মাথায় গুলি লেগেছে।’
শনিবার (২০ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে টাকাপোড়া ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে সাগরের দাফন সম্পন্ন হয়।