নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ‘নিখোঁজ’ হওয়া মেডিকেল অফিসার ডাক্তার জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) যাত্রাবাড়ী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছে, চিকিৎসক জাকির নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য।
সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আহমেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আহমেদুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ডাক্তার জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। তিনি এই সংগঠনের আদর্শসহ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করেন।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার জাকিরকে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাঁর সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হবে।’
গত ৮ নভেম্বর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষ করে সহকর্মী এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে এসএমএস পাঠিয়ে নিরুদ্দেশ হন ডা. জাকির হোসেন। এরপর থেকেই তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ভাঙ্গা থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত চিকিৎসক জাকির হোসেন ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগের দায়িত্ব শেষ করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ৩ মিনিটে জাকির হোসেনের ব্যবহৃত ফোন নম্বর থেকে স্ত্রী কলির ব্যবহৃত ফোনে এসএমএস দিয়ে জানানো হয়, বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল ফোন যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এর প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর ভোর ৫টা ৫৪ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ফোনে জাকির হোসেনের ফোন নম্বর থেকে এসএমএস পাঠিয়ে জানানো হয়, ‘শাশুড়ি অসুস্থ। জরুরি ঢাকায় যেতে হবে। আগামীকাল (১০ নভেম্বর) ফিরতে একটু দেরি হবে।’
জাকির হোসেন মানিকগঞ্জ শহরের বনগ্রাম আবাসিক এলাকার ৪৫/ ১ বাড়ির বাসিন্দা মো. সামসুল আলম ও জেসমিন আক্তার দম্পতির ছেলে। জাকির হোসেন বিবাহিত এবং এক সন্তানের বাবা। তিনি ৩৮তম বিসিএসে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর নবম গ্রেডে মনোনীত হয়ে ১১ ডিসেম্বর ভাঙ্গার তুজারপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারী সার্জন হিসেবে যোগ দেন।
তুজারপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো স্থাপনা না থাকায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত করা হয়। সেই থেকে তিন বছর ধরে তিনি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহসিন উদ্দিন ফকির বলেন, ‘আমি থানায় কথা বলে জানতে পেরেছি ডা. জাকির হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।’
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) যাত্রাবাড়ী থেকে ডা. জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে বিষয়টি শুনেছি। এর আগে চিকিৎসক জাকির হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ও তাঁর শ্বশুর ভাঙ্গা থানায় জিডি করেন।’