Ajker Patrika
হোম > সারা দেশ > ঢাকা

গোল্ডেন মনির খালাস: জব্দকৃত সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ বৈধ বললেন আদালত 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গোল্ডেন মনির খালাস: জব্দকৃত সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ বৈধ বললেন আদালত 

অস্ত্র আইনের মামলার পর কয়েক কোটি টাকার সোনা চোরাচালানের মামলাতেও খালাস পেয়েছেন গোল্ডেন মনির। গত রোববার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৫-এর বিচারক তেহসিন ইফতেখার এই খালাস দেন। 

ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে, গোল্ডেন মনিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সোনা তাঁর পরিবারের বৈধ সম্পদ। জব্দকৃত এসব সোনা গোল্ডেন মনিরকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। যদিও মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, গোল্ডেন মনিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সাড়ে সাত কেজি সোনা অবৈধ। 

ওই ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মো. মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে রায় ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অভিযোগ সত্য প্রমাণ না হওয়ায় আসামি গোল্ডেন মনিরকে খালাস দেওয়া হয়েছে। 

সরকারি কৌঁসুলি আরও জানান, গোল্ডেন মনিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সাড়ে সাত কেজি সোনা বৈধভাবে তাঁদের দখলে ছিল এবং এগুলো গোল্ডেন মনিরের স্ত্রী, মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহার্য সোনা। ট্রাইব্যুনালের কাছে সেটাই প্রমাণ হয়েছে। এ কারণে সোনাগুলো গোল্ডেন মনিরকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। 

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আরও বলেন, এ ছাড়া মামলার সাক্ষীরা একেকজন একেক ধরনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে মিল না থাকায় গোল্ডেন মনিরকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আপিল করার বিষয়ে। 

২০২০ সালের ২২ নভেম্বর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (বি) ধারায় মামলাটি দায়ের করেছিল র‍্যাব। এরপর তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২০২১ সালের ১২ জুলাই মামলার চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ডিবি) আব্দুল মালেক। 

চার্জশিটে বলা হয়, অভিযুক্ত মনির হোসেন সাড়ে সাত কেজি অবৈধ সোনা, (আনুমানিক বাজারদর সাড়ে সাত কোটি টাকা) ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা পাচারের উদ্দেশ্যে নিজ হেফাজতে রেখেছেন। উদ্ধার হওয়া সোনা কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে দেশে আনা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। 

আদালত রায় পর্যালোচনায় বলেন, চার্জশিটের ১০ থেকে ১৪ নম্বর সাক্ষীরা ঘটনাস্থল (গোল্ডেন মনিরের বাড়ি) থেকে আলামত উদ্ধার হতে দেখেননি। তাঁরা সকলেই র‍্যাবের চাপাচাপিতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হন। অর্থাৎ নিরপেক্ষ পাঁচজন সাক্ষীই রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যকে সমর্থন করেনি। তাঁরা সকলেই জব্দ তালিকার সাক্ষী। 

এ ছাড়া ঘটনার দিন ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর হলেও ওভার রাইটিং করে পরবর্তীতে এজাহারে ২১ নভেম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। জব্দ তালিকার চারজন নিরপেক্ষ সাক্ষীই বলেছেন ঘটনার তারিখ ২০ নভেম্বর। 

রায়ে আরও বলা হয়, জব্দকৃত আলামতসমূহ তথা স্বর্ণালংকার বৈধ আয় দিয়ে খরিদকৃত, যা ট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে। এসব মালামালের জন্য তিনি কর প্রদান করে থাকেন। 

রায়ে বিচারক আরও উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপক্ষ এবং অভিযুক্ত পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং আদালতে উপস্থাপিত দাখিলিক প্রমাণ স্পষ্টতই এজাহার এবং রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যের সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আদালত ধারণা করতে পারে যে, অত্র মামলাটি একটি সৃজিত মামলা। 

ঢাকার সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তদন্ত করে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অবৈধ স্বর্ণ দখলে রেখেছিলেন গোল্ডেন মনির। ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হয়েছে সেগুলো বৈধ। আর সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য? এটা অবিশ্বাস্য! এখন পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে বোঝা যাবে বৈধ স্বর্ণ উদ্ধার সত্ত্বেও অবৈধ স্বর্ণ দখলে রাখার অভিযোগে মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।’ 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সঞ্জীব চন্দ্র দাস বলেন, ‘এতগুলো সোনার বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য এবং ট্রাইব্যুনালের রায়ের বক্তব্য বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। পুলিশ ও ট্রাইব্যুনালের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, গোল্ডেন মনিরের বাড়ি থেকে সাড়ে সাত কেজি সোনা উদ্ধার হয়েছে। তার যদি বৈধ সোনা হয় তাহলে এত দিন এই দাবি ওঠেনি কেন?’ 

রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসায় ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ৮ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা, সাড়ে ৭ কেজি স্বর্ণালংকার ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনসহ বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছিল র‍্যাব। 

পরে মনিরের অবৈধ সম্পদ ও অপরাধলব্ধ আয়ের তথ্য-প্রমাণ পেয়ে ২০২২ সালের ১১ মে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এ ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। 

গত ৫ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় গোল্ডেন মনিরকে খালাস দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। 

মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বাবা কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকার নিউমার্কেট ও গাওছিয়া মার্কেট এলাকায় ফেরি করে গামছা বিক্রি করতেন। মনির দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। বাড্ডায় নানার বাসায় থেকে তিনি বড় হয়েছেন। বাবার সূত্রে মনিরেরও ব্যবসার শুরু একইভাবে। পরে তিনি মৌলভীবাজার থেকে কাপড় এনে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করা শুরু করেন। এভাবে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে ব্যাংকক-সিঙ্গাপুরে আসা-যাওয়ার মাধ্যমে লাগেজ ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসার আড়ালে তিনি সোনা চোরাচালান ব্যবসায় জড়িয়ে যান। এরপর থেকে তিনি গোল্ডেন মনির হিসেবে পরিচিতি পান।

বিএনপিতে ফেরার আবেদন নৌকার চেয়ারম্যান সেন্টুর

রোজার শুরুতেই চকের ইফতারি কিনতে ভিড়

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্বেগ

সেনাসদস্যকে এক গাড়ি ধাক্কা দেয়, আরেক গাড়ি পিষে যায়

সালিসে ‘পক্ষপাতিত্ব’: মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৩ গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ১৫

নারায়ণগঞ্জে পিস্তল-গুলিসহ ২ ভাই গ্রেপ্তার

বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি: এক সপ্তাহেও কোনো গ্রেপ্তার নেই

সৌদিগামী ছেলেকে বিদায় দিতে হোটেলে উঠেছিলেন মিরন, আগুন কেড়ে নিল প্রাণ

অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে: ফায়ার সার্ভিস

দুর্নীতির মামলায় খালাস পেলেন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান