মানিকগঞ্জের ঘিওরে হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সম্প্রীতির মেলা। উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের আয়োজনে এই মেলায় বরাবরের মতো এবারও হাজারো মানুষের সমাগম হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শুরু হয় মেলাটি। শেষ হবে আজ বুধবার বিকেলে।
উপজেলার দুর্গা নারায়ণ (ডি.এন) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত মেলাটি বিজয়া দশমীর মেলা নামেও পরিচিত।
আয়োজকেরা জানান, উপজেলা সদরের সব পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের আগে পুরোনো ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে স্কুলের মাঠে জড়ো করা হয়। পুরো মাঠ ভরে যায় প্রতিমায়। বিসর্জনের আগে হিন্দু নারীদের উলুধ্বনি আর কান্নায় চারপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। মেলায় সব ধর্মের মানুষের ঢল নামে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এই উজ্জ্বল নজিরের ঐতিহ্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
গতকাল মঙ্গলবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান ছাড়াও তৈজসপত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীর শতাধিক দোকান বসেছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া মেলার মাঠে বসানো নাগরদোলায় চড়ে আনন্দ করতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের।
ঘিওর উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার শীল গোবিন্দ বলেন, বিজয়া দশমীর সম্প্রীতির মেলায় সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে সরগরম থাকে পুরো এলাকা। এ ঐতিহ্য ২০০ বছরের বেশি। এবার এই মেলায় গানবাজনা, নৃত্যসহ নানা অনুষঙ্গ বাড়তি আনন্দ দিয়েছে।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক সম্পাদক রাম প্রসাদ সরকার দীপু বলেন, বিজয়া দশমীর দিন সব ধর্মের মানুষ মেলার আনন্দ উপভোগ করতে সমবেত হয় এই স্কুলের মাঠে।
ঘিওর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিজয় দশমীর দিন এখানে সম্প্রীতির মেলা বসে। আনন্দে মেতে ওঠে সব ধর্মের মানুষ। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এমন সম্প্রীতির মেলা অন্য কোথাও সচরাচর দেখা যায় না।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুর রহমান বলেন, সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর এই মেলা। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে এক প্রাণে মেশে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক দেখভাল করছে পুরো অনুষ্ঠানটি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন মিলনমেলা সত্যিই বিরল। ধর্মের বিভেদ, বিভাজন কোনো দিনই এই মেলার সর্বজনীনতায় দেয়াল তুলতে পারেনি।