রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির বিভিন্ন সড়ক এখন কাদাময়। অবৈধ ট্রাকে পরিবহন করা মাটি রাস্তায় পড়ে বেহাল হয়ে পড়েছে উপজেলার রাস্তাঘাট। সামান্য বৃষ্টিতে সেই মাটি কাদাময় হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘটছে নানান দুর্ঘটনা। অন্যদিকে ভারী এসব ট্রাক চলাচল করায় নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। ইটভাটার মালিকেরা জনদুর্ভোগকে পাত্তা না দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
আজ রোববার সকাল সরেজমিন দেখা গেছে, হালকা বৃষ্টি হওয়ায় বালিয়াকান্দির সদর ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি থেকে নারুয়া, বালিয়াকান্দি থেকে তেঁতুলিয়া ও গনপত্যা, জামালপুরসহ প্রতিটি রাস্তায় ব্যাপক কাদার সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাস্তায় চলাচলকারী জনগণ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এ ছাড়া ভ্যান, অটোরিকশা, চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীদের ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতিটি ইটভাটার সামনে থেকে দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তায় ভাটার মাটি পড়ায় চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় মাটি পড়ে পিচ্ছিল হওয়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
কোনো কোনো ইটভাটার সামনে আবার পিচ ঢালা রাস্তায় ট্রাক থেকে পড়া মাটির ওপরে বালি ছিটানো হচ্ছে। যা সাময়িক কাজ করলেও ভোগান্তি কমবে না বলে বলছেন একাধিক গাড়িচালক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার ট্রাক্টরে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মালামাল বহন করায় মাটি সড়কে পড়ে। বেশ কিছুদিন ধরে ধুলায় টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছিল। এখন বৃষ্টি হওয়াতে পাকা রাস্তাটি কাদাময় হয়ে পড়েছে।
রাস্তায় চলাচলকারী ইয়াসিন বলে, ‘বালিয়াকান্দির সড়কগুলো কাদা পড়ে ও বৃষ্টিতে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। আগে ধুলায় চলাচল মুশকিল ছিল, এখন এই মাত্রা আরও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই।’
পথযাত্রী মাসুদ বলেন, ‘ধুলার কারণে বাড়িতে থেকে ঠিকভাবে খাবার খেতে পারি না। ধুলাবালিতে বাতাস এখন বিষাক্ত। তার ওপরে আবার কাদা! আমরা কবে এসব শোষণ থেকে মুক্তি পাব?’
শালমারা থেকে বাইসাইকেলে বালিয়াকান্দিতে আসা আজিজ মন্ডল বলেন, ‘সাইকেলে চড়ে যাচ্ছিলাম বালিয়াকান্দি বাজারে। বালিয়াকান্দির ইটভাটার সামনে এসে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় পড়ে গেছি। হাঁটুটা একটু ছিলে গেছে। এই যুগে এসে পাকা রাস্তায় যদি পড়ে যেতে হয়, এর থেকে বড় দুর্ভাগ্য কী হয় বলেন?’
অটোরিকশার চালক প্রণব বলেন, ‘এই ইটভাটার সময় আমরা শুষ্ক মৌসুমেও ঠিকভাবে গাড়ি চালাতে পারি না। রাস্তায় মাটির কয়েক ইঞ্চি প্রলেপ পড়ে থাকে। এই মাটি ও মাটি টানার অবৈধ গাড়িতে বেশ কিছু অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে তো মানুষই মারা গেল। মাটি টানতে তো মানা নেই, কিন্তু তারা এমনভাবে মাটি টানুক, যেন রাস্তায় না পড়ে। তাহলেই তো ভোগান্তি দূর হয়। কে শোনে কার কথা। যারা মাটি টানে তারা প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেও সবাই ভয় পায়। এ জন্য এসব ভোগান্তি মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা দ্রুতই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। যাদের কারণে রাস্তার এমন দশা হচ্ছে বিশেষ করে ইটভাটা, তাদের রাস্তা পরিষ্কারের নির্দেশনা দেওয়া হবে। তারপরও যদি এমনটি ঘটে থাকে তাদের জরিমানার আওতায় আনা হবে। তাদের জন্য সাধারণ মানুষের জন্য দুর্ভোগ হবে—এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’