কিশোরগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ জ্যোৎস্না বেগমকে হত্যার দায়ে স্বামী চাঁন মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ আসামি চাঁন মিয়ার উপস্থিতিতে এ রায় দেন।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অপর আসামি মুসা মিয়াকে খালাস দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চাঁন মিয়া (৫৫) সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পূর্বভরাটি গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের রঘুনন্দনপুর গ্রামের জ্যোৎস্না বেগমের দ্বিতীয় বিয়ে হয় পূর্বভরাটি গ্রামের মৃত আমির আলীর ছেলে চাঁন মিয়ার সঙ্গে। প্রায় আট বছরের দাম্পত্য জীবনে স্বামী চাঁন মিয়া প্রায়ই যৌতুকের কারণে স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে স্বামী চাঁন মিয়া স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমকে জমি বিক্রি করে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। কিন্তু স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম রাজী না হওয়ায় নির্যাতন চরমে পৌঁছে।
পরে ২০১৮ সালের ২১ মে নাকভাঙ্গা এলাকায় জ্যোৎস্না বেগম এবং তাঁর বড় বোন আনোয়ারা বেগমের ওপর হামলা চালান চাঁন মিয়া। তাঁর উপর্যুপরি ছুরির আঘাতে জ্যোৎস্না বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনার দুই দিন পর ২৪ মে নিহতের ছোট ভাই আলাল মিয়া বাদী হয়ে দুজনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করেন। শুনানি শেষে আজ দুপুরে আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর পিপি আইনজীবী এম এ আফজাল এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এম আবদুর রউফ।
নিহতের ভাই ছোট ভাই আলাল মিয়া বলেন, ‘আমি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। পৃথিবীতে চাঁন মিয়ার মতো পাষণ্ড আর কোনো বোনের স্বামী যেন না হয়। এরা সমাজের বিষ। টাকার জন্য চাঁন মিয়ার মতো মানুষ সবকিছু করতে পারে।’
আসামি চাঁন মিয়ার স্বজনেরা বলেন, ‘আমরা এ রায় মানি না। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এম এ আফজাল বলেন, ‘এ রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মানুষের আদালতের রায়ে আস্থা বাড়বে। নিহতের পরিবারের সদস্যরা আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। তাঁরা বিচার পেয়েছেন।’