প্রতিবছর দেশের মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, যার অন্যতম কারণ তামাক ও তামাকপণ্যের ব্যবহার। ধূমপান না করেও বছরে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয় ৬১ হাজার শিশু। তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে মৃত্যুবরণ করে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ।
তামাকের এই ভয়াবহতা উপলব্ধি করে দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়েছে। কিন্তু সেই আইনে ফাঁকফোকর থাকায় ধূমপানমুক্ত সমাজ গড়া যাচ্ছে না, যার ফলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আজ শনিবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পার্লামেন্টারি ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে। আলোচনা সভায় তামাক আইন সংশোধনের দাবি জানানো হয়।
সভার সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর বলেই ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ডাক দিয়েছেন। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আছে, কিন্তু আইনে ফাঁকফোকর রয়েছে। শুধু সরকার ও প্রশাসন দিয়ে ধূমপান ঠেকানো যাবে না। আইন যেমন সংশোধন করতে হবে, তেমনই গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এখন সিগারেট খাওয়ার হার আরও বেড়েছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে ধূমপানের হার বাড়ছে। আমাদের দেখতে হবে কীভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের বিদ্যমান আইন যা আছে, তাতে সংশোধনী প্রয়োজন রয়েছে।
সভায় তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তাঁর উপস্থাপনায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে কিছু বিষয় সংযোজন জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বিদ্যমান আইনের কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে বলে তুলে ধরা হয়। বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে জনসমাগম ও গণপরিবহনে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা মোড়কবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো পণ্য নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি করার দাবি জানানো হয়।
তামাক নিয়ন্ত্রণে ফোরামের নানান সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত। তিনি বলেন, ‘ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর ১৫২ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত চিঠি প্রদান। ১৫৩ জন সংসদ সদস্য মিলে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ই-সিগারেটসহ তামাক আইন সংশোধনে ডিও লেটার প্রদান। সকল তামাক পণ্যে কর ও মূল্যবৃদ্ধির জন্য অর্থমন্ত্রীর নিকট চিঠি প্রদান। আমরা সকলে মিলে আমাদের এই কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে চাই।’
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের প্রতিনিধিরা। আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংস্থা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি।