নরসিংদী রায়পুরায় বেগুন উৎপাদন বেশি হলেও বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা। লাভবান হওয়া দূরের কথা খরচের টাকা উঠবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বেগুন বিক্রির টাকায় শ্রমিক, গাড়ি ভাড়াও জোগাড় করা কষ্টসাধ্য। ফলে আগামী বছর আর বেগুন চাষ করবেন না বলেও জানান অনেকে।
আজ বুধবার দুপুরে রায়পুরার উত্তর বাখরনগর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জমি থেকে বেগুন উঠিয়ে গাড়িতে করে নিয়ে আসতেই চলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর-কষাকষি। চাষিরা পাইকারদের সঙ্গে দর-দামে হলেই বিক্রি করছেন।
স্থানীয় কয়েকজন চাষিরা জানান, সবজির ভান্ডার খ্যাত জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধ নরসিংদী। চাহিদার তুলনায় বেগুনের চাষাবাদ ভালো হয়েছে। সবজিসহ বেগুন চাষ করে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তাঁরা।
কৃষক মোমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে লম্বা বেগুন চাষ করে খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। গাছে ফলন ভালো হয়েছে। রমজানের শুরুতে ভালো দামে ভালো মুনাফার আশায় ছিলাম। তবে বাজার দৌরাত্ম্যের কারণে দাম না পেয়ে হতাশ। বাজারে ভালো বেগুন মণ প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি না। মাত্র ৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।’
আরেক চাষি মরম আলী জমি থেকে বেগুন উঠিয়ে রাস্তার পাশে ওজন করছেন। এ সময় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। তিনি বলেন, ‘৩০ শতক জমিতে বেগুন চাষ করে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এত দিনে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছি। শ্রমিক, সার, বীজসহ যেসব খরচ হয়েছে বেগুন বিক্রি করে এর অর্ধেক খরচও আসবে না। আগামীতে আর বেগুন করব না।’
মরজিনা আক্তার নামের এক কৃষাণী বলেন, ‘পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও নিয়মিত কাজ করেছি। সার কীটনাশকসহ সবকিছুর দাম বেশিতে বেগুনের দাম কম থাকায় শ্রম খরচ ওঠাতে হিমশিম খাব। বেগুন আর করব না।’
‘৬-৮ জন মিলে ১০-১২ জন শ্রমিক নিয়ে এই ব্যবসাটা করি। প্রতিদিন এখান থেকে কয়েক হাজার বেগুন কৃষকদের কাছ থেকে কিনে ট্রাকে করে কুমিল্লা এলাকায় আড়তে বিক্রির জন্য পাঠাই।’ বলেন, পাইকারি ক্রেতা তাজুল ইসলাম।
পাইকারি ক্রেতা মো. মোখলেস বলেন, এখানকার সবজি চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হতো। ইমা কোম্পানি বিভিন্ন দেশে সবজি সাপ্লাইয়ার ব্যবসায়ী ছিলাম। করোনার পরে ১০ লাখ টাকা লসের পর ওই ব্যবসা বন্ধ। এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে বিভিন্ন আড়তে সবজি পাঠাই; এই নিয়ে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে বেচে আছি। এখন যে সবজির বাজার কম এর জন্য মূলত কারণ পরিবহন শুল্ক বৃদ্ধিতে বিদেশে রপ্তানি কমে গেছে। সরকার যদি রপ্তানিতে শুল্ক কমিয়ে বিদেশি বাজার ধরতে পারে তাহলেই চাষিরা ন্যায্য দাম পাবে।’