হোম > সারা দেশ > ঢাকা

মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় সাবেক এমপি অভি খালাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ৩৬
ফাইল ছবি

বিজ্ঞাপনের মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নিকে হত্যার ঘটনায় প্রায় দুই যুগ আগের মামলায় চার্জশিটভুক্ত একমাত্র আসামি জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) গোলাম ফারুক অভিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকার ২য় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোছা. শাহীনুর আক্তার এ রায় ঘোষণা করেন।

ঘটনার ২২ বছর পর এই মামলার বিচার নিষ্পত্তি হলো। আর পলাতক থেকেই খালাস পেলেন একমাত্র আসামি গোলাম ফারুক অভি। আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এডি. পিপি) সৈয়দ মোহাম্মদ আবু জাফর রেজভী রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে, ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু রায় ঘোষণা করতে গিয়ে ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক কেশব রায় চৌধুরী মামলায় পর্যাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণ না হয় মামলাটি পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এরপর তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর রায় ঘোষণা করা হলো।

আদালত রায়ে বলেছেন, মামলা সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে আদালত মনে করেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে ঘটনা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

যেভাবে উদ্ধার হয় তিন্নির লাশ
মামলার বিবরণ ও অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, তিন্নি হত্যাকাণ্ডের আগে ২০০২ সালের ৬ নভেম্বরে তাঁর স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করেন অভি। তিন্নিও তাঁকে তালাক দেন। ওই দিনই পিয়ালকে তাঁর দেড় বছর বয়সী কন্যা সন্তানসহ রাজধানীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর বিয়ে করার জন্য অভিকে চাপ দিতে থাকেন তিন্নি।

কিন্তু অভি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে তিন্নি বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে ১০ নভেম্বর রাতে মাথায় আঘাত করে তিন্নিকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুমের উদ্দেশ্যে ওই রাতে বুড়িগঙ্গার ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ওপর থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয় লাশ। কিন্তু পানিতে নয়, লাশটি পড়ে পিলারের উঁচু অংশে। পরদিন সকালে লাশ ঘিরে জমে উৎসুক জনতার ভিড়।

কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহালের পর ময়নাতদন্ত করে। মর্গে চার দিন রাখার পর ১৫ নভেম্বর অজ্ঞাত হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয় তিন্নিকে।

এদিকে তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হারানো ডায়েরি করেন। পরে তিন্নির পরিবারের লোকজন ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেন। তিন্নির চাচার ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই পরে হত্যা মামলা হয়।

মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের এএসপি মোজাম্মেল হক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে সাক্ষী করা হয়। এ ছাড়া এই মামলায় ২২টি আলামত জব্দ করা হয়। ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তিন্নি হত্যা মামলায় আসামি অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে ২৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। তিন্নির চাচা রেজাউল করিম ও বাবা মাহবুব করিম আদালতে সাক্ষ্য দেন।

গোলাম ফারুক অভির উত্থান
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে গোলাম ফারুক অভির উত্থান ঘটে। ছাত্র হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বোর্ড পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন ঠেকাতে এরশাদের নজর পান অভি। ওই সময় অপহরণ ও মুক্তিপণ এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন।

একপর্যায়ে অভি গ্রেপ্তার হন। তবে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের চরম পর্যায়ে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান।

তিন্নি হত্যাকাণ্ডের পর অভি কানাডায় পালিয়ে যান। কানাডার টরোন্টো থেকে অভি পাওয়ার অব অ্যাটর্নির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে এক আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটির স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। বাংলাদেশে নিম্ন আদালতে চলমান মামলাটিতে অংশ নেওয়ার জন্য (ওই দেশে অবস্থিত) বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট চেয়ে পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। ইচ্ছে থাকলেও দেশে আসতে পারছে না বলেও উল্লেখ করেন। তাই তার ন্যায়বিচার পাওয়ার স্বার্থে পাসপোর্ট পেয়ে দেশে আসা পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয় অভির পক্ষে।

শুনানি শেষে একই বছরের ১৫ জানুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১১ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট মামলাটির স্থগিতাদেশ দেন। এই কারণে প্রায় সাত বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত ছিল। পরে হাইকোর্টের আদেশে মামলার কার্যক্রম আবার চালু হয়।

সাবেক মন্ত্রীর ছত্রচ্ছায়ায় ত্রাস, এখন যুবদল নেতা

শ্রীপুরে প্রেমের দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

খিলগাঁওয়ে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

স্বর্ণালংকার-অর্থ উদ্ধারের পর ফেরত না দিয়ে বাদীকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি ওসির

সেকশন