অনিক সিকদার, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)
একদিকে বইছে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে টিউবওয়েল চাপলেও আসছে না পানি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার করছে হাজার হাজার পরিবার। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমন চিত্র রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আশপাশের অঞ্চল থেকে এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নমুখী। যে কারণে প্রতিবছর পানির স্তর ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি নিচে নেমে যাচ্ছে।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব টিউবওয়েল বসানো হয়েছে, সেগুলোতে এখন আর পানি উঠছে না। পানি না ওঠার কারণ হিসেবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বলছে, বালিয়াকান্দিতে বর্ষা মৌসুমে পানির স্তর থাকে ১৫ থেকে ২২ ফুট নিচে। আর শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে সেটা নেমে দাঁড়ায় ৩২ ফুট নিচে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো ৬ নম্বর টিউবওয়েলগুলোর পাম্পিং ক্ষমতা ২০ থেকে ২৪ ফুট। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলে পানি থাকে না। শুধু সরকারিভাবে বসানো তাঁরা ও সাব-মার্জিবল টিউবওয়েল পানি থাকে।
জঙ্গল ইউনিয়নের চরপোটরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় টিউবওয়েল রয়েছে। টিউবওয়েল থাকলেও বেশির ভাগ টিউবওয়েলে নেই পানি। মাঝে দুয়েক বাড়ির টিউবওয়েলে পানি ওঠায় সেখান থেকে সবাই শুধু খাবার জন্য পানি সংগ্রহ করছেন।
চর আড়কান্দি গ্রামের ইসমাইল বলেন, প্রায় ১০-১৫ দিন টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। চাপলেও ওঠে না। শুধু হাওয়া আসে, পানি আসে না। এতে খাবার পানি, গোসলের পানি ও টয়লেটের জন্য প্রয়োজনীয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যাদের বাড়িতে পানি উঠছে, তাদের বাড়িতে গিয়ে আনতে হচ্ছে।
নারুয়া ইউনিয়নের বিলধামু গ্রামের বাসিন্দা বলেন, ‘পানির কষ্টে খুবই কঠিন দিন পার করছি। বেশির ভাগ কাজই পুকুরের পানি দিয়েই করতে হচ্ছে। আর খাবার পানি প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে দিনে একবার করে নিয়ে আসি। তাদের বাড়িতে সাব-মার্জিবল থাকায় পানি উঠছে।’
নবাবপুর ইউনিয়নের বিল কাতুলি গ্রামের গৃহবধূ নাসরিন আক্তার বলেন, ‘গোসলের পানি দূরে থাক, খাবার পানিই উঠছে না ঠিকমতো। অনেকক্ষণ ধরে চাপলে পানির জগ ভরে। এইভাবেই কষ্টে দিন যাপন করছি।’
নিরাপদ পানির নিশ্চয়তার জন্য সরকারের কাছে ১০ হাজার টিউবওয়েল চাহিদা পাঠানো হয়েছে জানিয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘বালিয়াকান্দির ৬০ শতাংশ পরিবারে এখন পানির অভাব রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের ওপর প্রভাব পড়ছে। বৃষ্টি হলে পানির স্তর কিছুটা বৃষ্টি পাবে।’