Ajker Patrika
হোম > সারা দেশ > ঢাকা

পঙ্গু বাবা-মায়ের শেষ সম্বল শরীফ হারিয়ে গেল ঘুমের ঘোরে

আল-আমিন রাজু, ঢাকা

পঙ্গু বাবা-মায়ের শেষ সম্বল শরীফ হারিয়ে গেল ঘুমের ঘোরে

কুমিল্লার চান্দিনার তিরচরের কিশোর শরীফ (১৫)। এই বয়সে পড়াশোনা, আর বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা তার। কিন্তু শরীফের ভাগ্যে লেখা ছিল অন্য কিছু। পঙ্গু বাবা ও অসুস্থ মায়ের একমাত্র সম্বল শরীফকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল সংসারের হাল। ছিল বলতে হচ্ছে কারণ, আজ সোমবার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের খাতায় নাম লিখিয়েছে শরীফ।

এক বোন ও বাবা-মাকে নিয়ে ছিল শরীফের সংসার। বাবা গাছ থেকে পড়ে পঙ্গু হয়ে যান। মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ায় বিছানাতেই তাঁর দিন কাটতে শুরু করে। এখনো সে অবস্থাতেই আছেন। আর মা ভুগছেন কিডনির অসুখে। বড় বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় অসহায় বাবা-মায়ের একমাত্র ভরসা ছিল শরীফ। বাবা-মায়ের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে শরিফ কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসে। পরিচিত একজনের মাধ্যমে রোজ ৪০০ টাকা বেতনে কাজ নেয় চকবাজারের দেবীদ্বার ঘাট কামালবাগ লেনের বরিশাল হোটেলে। সেখানে কাজ করে বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠাত শরীফ। সেই টাকাতেই চলত সংসার ও তাঁদের ওষুধের খরচ। কিন্তু সোমবার আগুন কেড়ে নিল সব। 

গতকাল রোববার সারা রাত কাজ শেষে সকালে অন্য পাঁচ সহকর্মীর সঙ্গে হোটেলের ওপরে থাকা রুমে ঘুমাতে যায় শরীফ। দুপুরেই গ্যাসের লাইন থেকে লাগা আগুনে ঘুমন্ত শরীফ চলে গেল চির ঘুমের দেশে। অসহায় বাবা-মায়ের একমাত্র সম্বল হারিয়ে গেল প্লাস্টিক গুদামের আগুনে। 

সোমবার দুপুরে আগুনের খবরে শরীফের খোঁজে আসেন মামা আরিফ ও নানি সালমা বেগম। নাতির সন্ধান না পেয়ে বরিশাল হোটেলের সামনে আহাজারি করতে থাকেন সালমা বেগম। আরিফ বৃদ্ধা মা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে চকবাজারের কামালবাগ লেনের আকাশ-বাতাস। 

শরীফের মামা আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শরীফ নাইট ডিউটি করে ঘুমিয়েছিল। আগুন লাগার খবর শুনে তার নম্বর বন্ধ পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। এসে দেখি আমার ভাগনা এক ঘুম থেকে চলে গেছে চীর ঘুমে।’ 

শরীফের নানি সালমা বেগম বলেন, ‘শরীফ আমার ভাগনির ছেলে।’ আহাজারি করে তিনি বলেন, ‘আমার ভাগনি জামাইয়ের মেরুদণ্ড ভাঙা, ভাগনি অসুস্থ। শরীফই বাবা-মায়ের ওষুধ খরচসহ সংসার চালাত। এখন কী হবে এই পরিবারের।’ 

শরীফ সম্পর্কে তার সহকর্মী বরিশাল হোটেলের বাবুর্চি আবুল কাশেম বলেন, ‘৪০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে রাতের শিফটে কাজ করত শরীফ। খুব ভালো ছেলে ছিল। কারও সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি।’

চকবাজারের কামালবাগ লেনের আগুনে শুধু শরীফ নয়, তার সঙ্গে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও পাঁচজন। এর মধ্যে দুজনের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। বাকিরা হলেন—বিল্লাল (৩৩), ওসমান (২৫) ও স্বপন (২২)। নিহতদের সবাই বরিশাল হোটেলের কর্মচারী বলে জানা গেছে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। 

এদিকে উদ্ধার হওয়া মরদেহ চেনার উপায় নেই বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা সদরের জোন-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের শরীর এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, তাঁদের চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। আগুনে পুড়ে পাঁচ মরদেহের হাড় বেড়িয়ে গেছে। আরেকজনের চেহারা দেখলে কিছুটা বোঝা যায়। মরদেহগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা, তাঁরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের শুরুর দিকেই হয়তো তাঁরা মারা গেছেন। ডিএনএ কিংবা অন্য প্রক্রিয়ায় লাশ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

আয়োজন বেশি, ক্রেতা কম

গুলশানের একটি বাড়িতে মব তৈরি করে লুটপাট

জ্বলে না চুলা, ইফতারি তৈরিতে হিমশিম রাঁধুনি

‘পর্দা’ না করায় ঢাবি ছাত্রীকে হেনস্তা করা কর্মচারী আটক

তরমুজ নিয়ে ব্যবসায়ী ও ছাত্রদল নেতার মারামারি

ইয়াবাসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা গ্রেপ্তার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাকে পিটিয়ে জখম

মা-বাবাসহ ৭ জনকে কোপালেন যুবক, একজনের মৃত্যু

স্বামীর বাইক কিনে দেওয়ার চাপে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’

গুলশানে বাসা ভাঙচুর: ৩ আসামির রিমান্ড-জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে