ওপরে শরতের নীল আকাশ, নিচে যৌবনা নদী। আছড়ে পড়ছে একের পর এক ঢেউ। নদীতে যেন মেলা বসেছে বাহারি রং আর আকৃতির নৌকার। হরেক সাজের পোশাকে মাঝি-মাল্লাদের সমবেত কণ্ঠের ‘হেইয়ো হেইয়ো’ শব্দের সঙ্গে যোগ হয়েছে নদীজলে বইঠার ঘাত। দুপাড়ে হাজার হাজার দর্শকের উত্তেজনা, উৎসুক দৃষ্টি আর মুহুর্মুহু চিৎকার-করতালি।
গতকাল সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার হেলাচিয়া এলাকায় কান্তাবতী নদীতে হওয়া নৌকাবাইচে চোখে পড়েছে এমন দৃশ্য। নৌকাবাইচ দেখতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানান, গত কয়েক মাস ধরেই দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সরকারের পালাবদল আর নানা ঘটনার পর এমন চমৎকার আয়োজন নির্ভেজাল আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দিয়েছে।
আয়োজকেরা জানান, হেলাচিয়া গ্রামবাসীর উদ্যোগে এ বার্ষিক নৌকা বাইচ চলে আসছে প্রায় ২০০ বছর ধরে।
বাইচ শেষে বিজয়ী নৌকার মালিকদের টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, চার্জার লাইট, কলসসহ বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়।
এলাকাবাসী জানান, এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও বিবাহিত মেয়েরা বাবার বাড়িতে নাইওরে আসেন, সেই সঙ্গে আসেন জামাই ও নাতি-নাতনিরা। এলাকাজুড়ে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। তবে আগের তুলনায় নৌকা বাইচ ও অতিথি আপ্যায়নে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
নৌকার নামকরণেও দেখা যায় ভিন্নতা। আল্লাহর দান, হারানো মানিক, গায়না তরী, সোনার চান, মায়ের দোয়া, জয়নগর, দাদা-নাতি, সোনার বাংলাসহ আরও হরেক নাম চোখে পড়ে। দর্শক দূর থেকে নৌকার অবয়ব থেকেই বলে দিতে পারে এটি কোন নৌকা।
নদী আর নৌকা বাইচের সঙ্গে মানিকগঞ্জের মানুষের আশৈশব মিতালি। এই মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় কমপক্ষে ৩০ স্থানে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে নদীতে পানি কম থাকা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং দেশের পরিস্থিতির কারণে এবার সংখ্যাটা কম।