উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শূন্য পদে নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে আবারও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। দাবি মানার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না পাওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে তাঁরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন।
এর আগে ফার্মগেট এলাকায় জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন শিক্ষার্থীরা।
ম্যাটস শিক্ষার্থীদের দাবি, গত ২২ জানুয়ারি শাহবাগে গণজমায়েতের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের দাবিগুলো পূরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেই সময়সীমা পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
ম্যাটস শিক্ষার্থীদের সংগঠন সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আহমাদুল্লাহ মানসুর বলেন, ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হলেও, ম্যাটস শিক্ষার্থীরা এখনো বৈষম্যের শিকার। আমরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু মন্ত্রণালয় আন্তরিকতার সঙ্গে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আজকের এই আন্দোলনে নেমেছি।’
তিনি আরও বলেন, এ আন্দোলনের দায়ভার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে নিতে হবে।’
তাঁরা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ছাড়বেন না। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ম্যাটস শিক্ষার্থীদের চারটি মূল দাবি হলো—
১. উচ্চশিক্ষার সুযোগ: ১৯৭৩-১৯৭৮ সালের বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
২. নতুন পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ: অনতিবিলম্বে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে শূন্যপদে নিয়োগ দিতে হবে এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে।
৩. ইন্টার্নশিপ পুনর্বহাল ও কোর্স কারিকুলাম সংশোধন: চার বছরের অ্যাকাডেমিক কোর্স বহাল রেখে এক বছরের ভাতাসহ ইন্টার্নশিপ পুনরায় চালু করতে হবে এবং কোর্স কারিকুলামের অসংগতিগুলো সংশোধন করতে হবে।
৪. নতুন বোর্ড গঠন: অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল শিক্ষা বোর্ড বাতিল করে ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামে নতুন বোর্ড গঠন করতে হবে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬টি সরকারি ও প্রায় ২০০টি বেসরকারি ম্যাটস প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ডিপ্লোমা মেডিকেল ডিগ্রি (ডিএমএ) কোর্স পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২২ এবং বিএমডিসির তথ্যমতে, সারা দেশে বর্তমানে ৬০ হাজারের বেশি ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থী রয়েছে এবং বিএমডিসি নিবন্ধিত ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বর্তমানে ৫ হাজার ৫০০ জন ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসক বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগবিধি সংশোধনের নামে টালবাহানা চলছে, ফলে হাজার হাজার ডিপ্লোমাধারী বেকার হয়ে আছেন।