জহিরুল আলম পিলু, শ্যামপুর-কদমতলী (ঢাকা)
‘আমার সন্তান তো কোনো দোষ করেনি। কেন তাকে অকালে জীবন দিতে হলো? আমার গ্যাদারে কী হামে মারল। আসতেছি বলে গেল জীবিত, ফিরল লাশ হয়ে।’
রাজধানী ঢাকার শনির আখড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত আমিনুল ইসলাম আমিনের (১৬) মা সেলিনা বেগম এসব বলে আহাজারি করছিলেন। ২১ জুলাই সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আমিনের মৃত্যু হয়।
আমিনুল ইসলাম আমিন কাজ করত একটি বৈদ্যুতিক সুইচ তৈরির কারখানায়। বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাড়া থাকত রাজধানীর কদমতলী থানার দক্ষিণ দনিয়ার নতুন এ কে হাইস্কুল রোডের মামুন হোসেনের টিনশেড বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ঘড়িপাশা গ্রামে। দুই ভাইয়ের মধ্যে আমিন ছোট। বাবা ওবায়দুল ইসলাম ও বড় ভাই শামীম এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
২১ জুলাই সন্ধ্যায় শনির আখড়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলন দেখতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় আমিন। এলাকাবাসী জানায়, আমিন ছিল খুবই ভদ্র, হাসিখুশি, সদালাপী ও চঞ্চল প্রকৃতির। বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা বিশেষ করে ফুটবল ছিল তার প্রিয় খেলা। সময় পেলেই বাসার পাশের গলিতে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলত।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেলিনা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার দিন আমার ছেলে আমিন সারা দিন বাসায় ঘুমিয়েছিল। আসরের আজানের পর ঘুম থেকে উঠে দোকান থেকে আমাকে চাল এনে দেয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আমার কাছে ২০টা টাকা চায়। টাকা দিলে সে আসতেছি বলে বেরিয়ে যায়। মাগরিবের আজানের একটু আগে শনির আখড়া গোয়ালবাড়ি মোড়ে তার বুকে গুলি লাগে। সে কিছু দূর দৌড়ে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।’
সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থক। আমার সন্তানকে তো আর ফিরে পাব না। তাই কারও প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নাই। এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের খোঁজখবর নিতে আসেনি। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।’