Ajker Patrika
হোম > সারা দেশ > ঢাকা

বিনোদনকেন্দ্র খুঁজতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে মানুষের

অর্চি হক, ঢাকা

বিনোদনকেন্দ্র খুঁজতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে মানুষের

ঈদের দ্বিতীয় দিন দুই সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাওয়ার কথা ছিল বেসরকারি কর্মকর্তা হাফিজ ইমতিয়াজের। কিন্তু সকালে ফেসবুকসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তিনি দেখতে পান, চিড়িয়াখানায় লাখো মানুষের ভিড়। টিকিট কাউন্টারের সামনে গিজ গিজ করছে মানুষ। গরমে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হাঁসফাঁস করছেন তাঁরা। এই ভিড়ের মধ্যে ছোট দুই শিশুকে নিয়ে যাওয়ার সাহস পাননি। শেষ পর্যন্ত চিড়িয়াখানা দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন ইমতিয়াজ।

হতোদ্যম ইমতিয়াজ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভিড়ের মধ্যে বাচ্চাদের পশুপাখি দেখাব ক্যামনে, চিনাব ক্যামনে আর সামলাবই বা ক্যামনে! তাই আর চিড়িয়াখানায় গেলাম না। এখন ওদের নিয়ে সংসদ ভবনের দিকে যাচ্ছি। ওখানে ঘোড়ার গাড়িতে চড়াতে পারি কি না দেখি।’

আফসোস করে তিনি যোগ করেন, ‘বাচ্চাদেরও তো বিনোদনের দরকার আছে। কিন্তু ওদের নিয়ে যাবটা কই? আশপাশে সে রকম জায়গা তো নাই!’ 

কর্মক্লান্ত নাগরিক জীবনে একটু প্রশান্তির জন্য যেমন বিনোদনকেন্দ্রের বিকল্প নেই, তেমনি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্যও প্রয়োজন বিনোদনকেন্দ্র। কিন্তু রাজধানীতে এই জিনিসটির বড়ই অভাব বলে অভিযোগ ঢাকাবাসীর। ছুটির দিনগুলোতে সেই অভাবটাই প্রকট হয়ে ধরা দেয়। হাতে গোনা কয়েকটি বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় জমায় লক্ষাধিক মানুষ। মানুষের ভিড়ে আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়!

চিড়িখানার ভেতরেও ভিড়ের কারণে বিড়ম্বনায় দর্শনার্থীরাজাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকেল পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর পর ঈদের ছুটিতে চিড়িয়াখানায় আসতে পেরে তাঁরা খুশি। তবে বিনোদন নিতে এসে এমন জেরবার হতে হবে তা ভাবেননি।

তাসফিয়া আক্তার নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘এত মানুষ সকাল থেকে এখানে। অথচ একটা বাথরুমও ভালো নেই। শুধু মানুষ আর মানুষ! বানর, বাঘ আর সিংহের খাঁচার কাছাকাছি যাওয়ার উপায়ও নাই। ভিড়ের মধ্যে বাচ্চাদের কিছু দেখাতেও পারছি না।’

রাজধানীর আরেক জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্র হাতিরঝিলেও একই চিত্র। ঈদের ছুটিতে পুরো ঢাকা ফাঁকা হলেও হাতিরঝিল ও এর আশপাশের এলাকাতে নেমেছে মানুষের ঢল। কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে, কেউ পরিবার নিয়ে। কেউ রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে খাচ্ছেন, কেউ ফুলের মালা কিনে ছবি তোলায় ব্যস্ত। কিন্তু অত্যধিক ভিড়ের কারণে কম বেশি সবাইকেই পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। যানবাহন চলাচলেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। হাতিরঝিলে আসা সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘ফেসবুক, টিভি সব জায়গায় দেখি ফাঁকা ঢাকা। অথচ এখানে এসে দেখতেছি মানুষের ঠেলাঠেলি। নিরিবিলিতে একটু বসব তার উপায় নাই।’ 

ঈদের দ্বিতীয় দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বসে আড্ডারত তরুণ সজীব বললেন, ‘পৃথিবীর আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মনে হয় এত মানুষের ভিড় হয় না! ছুটির দিন মানেই টিএসসিতে পা ফেলার জায়গা থাকে না। অবশ্য মানুষ আর যাবে কই, ঘোরার জায়গা তো নাই!’

করোনাভাইরাসের কারণে টানা দুই বছর ঘরবন্দী ঈদ পালন করতে হয়েছে সবাইকে। এবারের ঈদে করোনার বিধিনিষেধ ছাড়াই বাইরে বের হতে পারায় সবাই খুব খুশি। কিন্তু ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনোদনকেন্দ্রের অপ্রতুলতা। বড়দের জন্য আছে হাতেগোনা কয়েকটি উদ্যান। ছোটদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র আরও কম। শিশুদের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র শাহবাগের শিশুপার্ক। কিন্তু সেটা ২০১৯ সাল থেকে বন্ধ। শ্যামলীতে ছোট পরিসরে ডিএনসিসির শিশু মেলা থাকলেও সেখানে রাইডের সংখ্যা কম। শিশুদের মন ভরছে না। ঢাকার অদূরে সাভারে ফ্যান্টাসি কিংডমসহ কয়েকটি পার্ক থাকলেও সেগুলো কিছুটা ব্যয়বহুল হওয়ায় একশ্রেণির মানুষ সেখানে যেতে পারেন না।

সবার সাধ্যের মধ্যে থাকা শাহবাগের শিশুপার্কটি বন্ধ থাকায় অভিভাবকদের আক্ষেপের শেষ নেই!

নাতিকে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা মুস্তাফিজুর রহমান বললেন, ‘সকাল থেকে নাতিটা গোঁ ধরছিল শিশুপার্কে নিয়ে যেতে। কিন্তু শিশুপার্ক তো বন্ধ। আর ফ্যান্টাসি কিংডম বহু দূর, তাছাড়া ব্যয়বহুলও। অত সামর্থ্য তো নাই! শিশুপার্কটা খোলা থাকলে সাধ্যের মধ্যে শিশুদের আনন্দের একটা জায়গা পাওয়া যেত।’

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে, নগরের জনসংখ্যা ২ কোটির বেশি। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদনকেন্দ্র এবং সেগুলোর ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের শহরে পর্যাপ্ত বিনোদনকেন্দ্র তো নেইই, যে বিনোদনকেন্দ্রগুলো আছে সেগুলোরও সুব্যবস্থাপনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। জাপান-সিঙ্গাপুরে খুব কম জায়গার মধ্যে সিস্টেমেটিক ওয়েতে ওরা বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে সবকিছুর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু আমাদের ঢাকায় যেই বিনোদনকেন্দ্রগুলো আছে সেখানে শৌচাগার, খাবারদাবারসহ নানা সমস্যা। দর্শনার্থীরাও বিনোদনকেন্দ্রে এসে তা নোংরা করে। আসলে আমরা জাতিগতভাবেই এ রকম। জাপান-সিঙ্গাপুরে ওরা সবকিছু নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে, আমাদের দেশে তেমনটা দেখা যায় না।’

নগরীতে বিনোদনকেন্দ্রের অপর্যাপ্ততা কাটাতে সরকারি পরিকল্পনার পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকেও বিনিয়োগ এবং অনুদান আসা দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগ এবং সুপরিকল্পনা তো অবশ্যই দরকার। সেই সঙ্গে বেসরকারি পর্যায় থেকেও সবার এগিয়ে আসা দরকার। আমাদের দেশে অনেক শিল্পগোষ্ঠী আছে। তারা চাইলেই বিনোদনকেন্দ্র বা বিনোদনকেন্দ্রের উন্নয়ন করতে পারে।’

এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক ২ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বিএসটিআই কর্মকর্তাদের ওপর হামলা, দ্বিতীয় দিনেও বন্ধ জুয়েলারি দোকান

সপরিবার নাঈমুল ইসলাম খানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন

নির্বাচনের দাবি উঠলেও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে উঠেছে না: নিহতের স্বজনেরা

মার্চের মাঝামাঝি ডাকসুর রোডম্যাপ: উপাচার্য

আনিসুল হক ও তাঁর পরিবারের ব্যাংক হিসাবে ১৪০ কোটি টাকা অবরুদ্ধের নির্দেশ

‘৬ মাস কোর্স করে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে চায়’

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়ন: পরিকল্পনাকারী ও সহযোগী দুই ভাই গ্রেপ্তার

উত্তরায় ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩