গাজীপুরের শ্রীপুরে স্কুলছাত্র অপহরণের পাঁচ দিন পর বাড়ি থেকে আট কিলোমিটার দূরে গভীর গজারি বনের ভেতর থেকে গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহটি পচেগলে দুর্গন্ধ ছড়ালে স্থানীয়রা গভীর গজারি বনের ভেতর শিয়ালে খাওয়া মরদেহটি দেখতে পায়।
আজ রোববার বিকেলে উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার একটি কেমিক্যাল কারখানার পাশে গভীর গজারি বনের ভেতর থেকে ওই স্কুলছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে শ্রীপুর থানা-পুলিশ।
পুলিশের ধারণা, অর্থ হাতিয়ে নিতে আপন চাচা কৌশলে তুলে নিয়ে স্কুলছাত্রকে খুন করেছে।
অপহৃত স্কুলছাত্র রামিমুল হাসান বিজয় (১৪) শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্নাপাড়া গ্রামের রুমান ব্যাপারীর ছেলে। সে স্থানীয় শতদল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
স্থানীয় বাসিন্দা রিকশাচালক ফালান মিয়া বলেন, ‘শ্রীপুর গোসিঙ্গা পাকা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করার সময় পচা দুর্গন্ধ পাওয়া যেত। আমরা কয়েকজন বিষয়টি স্থানীয় আরও কয়েকজনকে জানাই। স্থানীয়রা তখন গভীর জঙ্গলে গিয়ে শিশুর গলাকাটা মৃতদেহ দেখতে পায়। এরপর পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে শিয়ালে খাওয়া পচাগলা দুর্গন্ধযুক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।’
সরজমিন দেখা যায়, মরদেহটি গভীর গজারি বনের ভেতর পড়ে রয়েছে। শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। পেটের নাড়িভুঁড়ি কোনো কিছুই নেই। কোমরের ওপরের অংশ শিয়াল-কুকুরে খাওয়া।
অপহৃত শিশুর বাবা রুমান ব্যাপারী অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে বাড়ির পাশ থেকে আমার ছেলেকে অপহরণকারীরা তুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনসহ সবাইকে বিষয়টি অবহিত করি। এরপর সবার পরামর্শে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি জিডি করি।
রুমান ব্যাপারী আরও বলেন, ‘অপহরণের পরদিন বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আমার কাছে মোবাইল ফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কণ্ঠটি একটু বয়স্ক পুরুষের মনে হয়েছে। মুক্তিপণের ১০ লাখ টাকা নিয়ে নেত্রকোনার সুষম দুর্গাপুর যেতে বলে।
‘এই বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে কোনো যোগাযোগ নাই। এসব তথ্য আমি থানা-পুলিশকে অবহিত করেছি। কিন্তু পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। আমরা যা নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম। আজ তাই হলো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীপুর থানা-পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘স্কুলছাত্রের বাবার কাছ থেকে কৌশলে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিতে তারই চাচা জুয়েল ব্যাপারী তাকে অপহরণ করে। এরপর টাকা না পেয়ে গলা কেটে হত্যা করে। জুয়েল ব্যাপারী নিজেকে বাঁচাতে, নিজেই বাদী হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি জিডি করেন।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহত স্কুলছাত্রের পচাগলা শিয়ালে খাওয়া দুর্গন্ধযুক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত স্কুলছাত্রের কয়েকজন স্বজনকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে নিহতের চাচা জুয়েল ব্যাপারীও রয়েছে। কী কারণে স্কুলছাত্রকে তুলে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করল, তা দ্রুত বের হয়ে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, দুই দিন পূর্বে শিশুটিকে খুন করে অপহরণকারীরা।’