নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ বাসায় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় ছুরিকাঘাতে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এ কে এম আব্দুর রশিদকে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় হাজারীবাগ মডেল থানায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।
পুলিশের দাবি, ভোররাতে তিন চোরের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে প্রাণ যায় ওই চিকিৎসকের (৮২)। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনের পরিচয়ই শনাক্ত করতে পেরেছে। তাদের মধ্যে একজনকে আটক করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তিনজনের আমরা এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। তবে তাদের সঙ্গে আরও কেউ আছে কি না বা এ ঘটনায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনো রেশ ছিল কি না—তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় হাজারীবাগ মডেল থানাতে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।’
পুলিশ ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ধানমন্ডি-১৫ নম্বর এলাকায় পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় চিকিৎসককে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুর রশিদ ওই বাসার মালিক। তিনি ও তাঁর স্ত্রী এক ছেলে-মেয়েসহ যুক্তরাজ্যে থাকেন। গত সেপ্টেম্বরে তাঁরা দেশে আসেন।
ওই ভবনের ভাড়াটিয়া সাইদুর রহমান বাঁধন বলেন, ‘রাতে হঠাৎ চিৎকারে ঘুম ভাঙে। পরে তাঁদের রুমে গিয়ে দেখি আব্দুর রশিদ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন এবং তাঁর স্ত্রী মাথায় পানি ঢালছেন। তাঁকে তাৎক্ষণিক স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নিয়ে গেলে মারা যান তিনি।’
বাঁধন আরও জানান, এই দম্পতি প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আসেন এবং ডিসেম্বর চলে যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, ‘ওই বাসার ভাড়াটিয়ারা আব্দুর রশিদকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে রাত পৌনে ৪টার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি আব্দুর রশিদ বারান্দার দরজা খুলে নামাজ পড়ছিলেন, এ সময় দুই-তিনজন চুরির উদ্দেশ্যে ওই বাসায় ঢুকে পড়ে। সে সময় বাধা দিলে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। পরে কোনো কিছুর আঘাতে অথবা স্ট্যাব করলে তিনি মারা যান।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি, আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছি। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে তারা তিনজন ব্যক্তিকে দেখতে পেয়েছেন। ফুটেজে দেখতে পান, চোরেরা গ্রিল কেটে যে পথ দিয়ে আসছিল সেই পথেই আব্দুর রশিদ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছিলেন। তিনি তাদের বাধা দিলে তারা ছুরিকাঘাত করে। তাঁর স্ত্রী উঠে আসলে তাঁকেও আঘাত করে।
সিসিটিভি ফুটেজে ধরে ওই তিন ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করেছে বলে দাবি করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। প্রাথমিকভাবে তাঁরা এটাকে চুরি হিসেবে দেখলেও এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কি না তা তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।