হোম > সারা দেশ > ঢাকা

অমর একুশে বইমেলা: স্টল বরাদ্দ নিয়ে বিভক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০১: ৩৯
আর দিন কুড়ি পরই শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। এ জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রকাশকেরা। ছাপাখানায় চলছে বই ছাপানোর কাজ। মেলা মাঠে স্টল তৈরিতেও নেমে পড়েছেন শ্রমিকেরা। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ছবি: আজকের পত্রিকা

অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর স্টল বরাদ্দের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একটি পক্ষের কথিত কালোতালিকাভুক্তদের কম জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, বাস্তবেও অনেকটা তাই হয়েছে। এ নিয়ে প্রকাশকদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রকাশকদের কেউ কেউ বিগত আওয়ামী সরকারের আমলের সুবিধাভোগী হওয়ায় তাঁদের চিহ্নিত করে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সমালোচনা করেছে একটি পক্ষ।

তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোর একুশে বইমেলায় যাঁরা প্যাভিলিয়ন (প্রদর্শনী ও বিক্রির বড় জায়গা) পেয়েছিলেন, এবার তাঁদের অনেকে পাননি। জানা গেছে, প্রকাশকদের একটি পক্ষের করা কালোতালিকাভুক্তদের অপেক্ষাকৃত ছোট প্যাভিলিয়ন কিংবা ছোট আয়তনের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তালিকায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বড় (২৪ ফুট বাই ২৪ ফুট) আকারের প্যাভিলিয়ন পেয়েছে ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। ২০ বাই ২০ ফুট আকারের প্যাভিলিয়ন পেয়েছে ১২টি, ৪ ইউনিটের স্টল পেয়েছে ২৬টি, ৩ ইউনিট পেয়েছে ৪৮টি, ২ ইউনিট পেয়েছে ১৩৮টি এবং ১ ইউনিটের স্টল পেয়েছে ১৬২টি প্রতিষ্ঠান। শিশু কর্নারে ৩ ইউনিট ৭টি, ২ ইউনিট ২৩টি এবং ১ ইউনিট পেয়েছে ২৮টি প্রতিষ্ঠান।

সবচেয়ে বড় প্যাভিলিয়ন পাওয়া ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হলো অবসর, অনন্যা, ইউপিএল, স্টুডেন্টওয়েজ, প্রথমা, মাওলা ব্রাদার্স, ঐতিহ্য, কথাপ্রকাশ, পাঞ্জেরী, বাংলাপ্রকাশ, জ্ঞানকোষ, শোভা প্রকাশ, অন্যধারা ও আদর্শ। এর একটু ছোট প্যাভিলিয়নগুলো পেয়েছে অক্ষর, আকাশ, ইত্যাদি, ভাষাচিত্র, অনুপম, অন্যপ্রকাশ,আগামী,অ্যাডর্ন, আফসার, বাতিঘর, ইতি প্রকাশন ও গতিধারা।

গত বছর বড় প্যাভিলিয়ন পাওয়া বেশ কয়েকটি প্রকাশনীকে এ বছর ছোট প্যাভিলিয়ন বা ৪ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ বছর অপেক্ষাকৃত ছোট প্যাভিলিয়ন পাওয়া নিয়ে মন্তব্য চাইলে অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কোনো তথ্য প্রমাণ এবং যাচাই বাছাই ছাড়াই গুটিকয়েক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা খুবই দুঃখজনক।’

এবার কবি তারিক সুজাতের জার্নিম্যান বুকসকে কোনো স্টল দেওয়া হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার বইমেলার স্টল বরাদ্দ উপকমিটির বৈঠকে কোন প্রতিষ্ঠান কী বরাদ্দ পাবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। জানা গেছে, উপকমিটির কাছে একদল প্রকাশক কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নামে অভিযোগ করেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করে তাদের কালোতালিকাভুক্ত করার দাবি জানান তাঁরা।

কথিত কালোতালিকাভুক্ত প্রকাশনীগুলোর মধ্যে ছিল অনিন্দ্য প্রকাশ, অনুপম প্রকাশনী, অন্বেষা প্রকাশন, অন্যপ্রকাশ, আগামী প্রকাশনী, কাকলী প্রকাশনী, জার্নিম্যান বুকস, তাম্রলিপি, পাঠকসমাবেশ, পুঁথিনিলয়, মিজান পাবলিশার্স, সময় প্রকাশন, চারুলিপি প্রকাশন, জিনিয়াস পাবলিকেশনস, নালন্দা, পার্ল পাবলিকেশন্স, বিশ্বসাহিত্য ভবন ও শব্দশৈলী। জানা গেছে, অভিযোগকারীরা এবারের মেলায় এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণ স্টল বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেছিলেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি এবং লাবনী প্রকাশনীর কর্ণধার ইকবাল হোসেন সানু বলেন, বইমেলা উপকমিটির বৈঠকে অতীতে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর, বই-বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজি করা’ প্রকাশকদের কালোতালিকাভুক্ত করার বিষয়ে ‘ছাত্রজনতার দাবি’ উত্থাপন করা হয়। এর প্রেক্ষাপটে তাদের প্রতীকী শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বইমেলা পরিচালনা কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কালোতালিকায় থাকা কয়েকজন প্রকাশকের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদের ভাষ্য, প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ নিয়ে এই সিদ্ধান্ত কার্যত ‘ট্যাগ’-এর রাজনীতি। তাঁরা প্রশ্ন করেন, যে অভিযোগের ভিত্তিতে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তার প্রমাণ কোথায়। এই পক্ষের অভিযোগ, কালোতালিকা প্রস্তুতকারীদেরও অনেকে আগের আমলে সুবিধা নিয়েছে।

গত বছর প্যাভিলিয়ন পাওয়া পুঁথিনিলয় এবার পেয়েছে ৪ ইউনিটের স্টল। এর কর্ণধার শ্যামল পাল বলেন, ‘পুঁথিনিলয় কোনো টেন্ডার কিংবা সুবিধা নেয়নি। রাজনৈতিক কোনো যোগাযোগ ছিল না। যাঁরা এখন নেতা হয়ে এই দাবিতে জড়িত, তাঁরা কী মাপের প্রকাশক, সবাই জানেন।’

সম্প্রতি বইমেলার স্টল ভাড়া কমানো, প্যাভিলিয়ন-প্রথা বাতিলসহ বেশ কিছু দাবিতে বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, সাম্প্রতিককালে গঠিত বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এবং জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ প্রতীকী অনশন পালন করে।

জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন বলেন, ‘বইমেলায় স্টল বরাদ্দের জন্য গঠিত উপকমিটি এই সিদ্ধান্ত নেয়। সভায় উপস্থিত সদস্যরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্টল বরাদ্দ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

কাজে আসেনি পূর্বাভাস যন্ত্র

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাতাহাতি

দোহার ও নবাবগঞ্জ আসন পুনরুদ্ধারে লিফলেট বিতরণ