কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে দুই মাসের শিশু চুরির ঘটনায় সস্তু বেগম নামে এক নারী ও তাঁর জামাতা রুবেলকে আটক করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে রুবেলের গ্রাম বেত্রাহাটি থেকে শিশু জুনাইদকে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিং শেষে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ মা নাজনীনের কোলে শিশুটিকে তুলে দিয়েছেন।
এর আগে গতকাল রোববার (০৯ জুন) গভীর রাতে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামের গৃহবধূ নাজনীনের টিনের দোচালা ঘরে সিঁধ কেটে দুর্বৃত্তরা তাঁর দুই মাস বয়সী শিশু জুনাইদকে চুরি করে।
সোমবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটার পর আমরা বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযানে নামি এবং তাতে সুফলও পাওয়া যায়। আমরা ওই গ্রামের সস্তু বেগম (৫৫) নামে এক নারীকে আটক করি। যার মেয়েকে সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের বেত্রাহাটি গ্রামের মৃত শহীদ মিয়ার ছেলের কাছে বিয়ে দেওয়া হয়।’
পুলিশ সুপার আরও জানান, গত রোববার কিশোরগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চতুর্থবারের মতো একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। একই সঙ্গে রুবেলকেও আটক করলে ঘটনার জট খুলে যায়। রুবেল এবার তার কন্যা সন্তানের সঙ্গে একটি পুত্র সন্তানেরও জন্ম হয় বলে দাবি করেন। সে ওই দুই বয়সী শিশু জুনাইদকে চুরি করে ওই ক্লিনিকে এনে সদ্যোজাত নবজাতকের মতো চুরি করা শিশুটির নাভিতে স্কচটেপ লাগিয়ে রাখে। কিন্তু বাচ্চার বয়স ও আকৃতি একদিনের নবজাতকের মতো না হওয়ায় সন্দেহ গাঢ় হয়। পরে শাশুড়ির সঙ্গে তাঁকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
একপর্যায়ে পুলিশের কাছে সে স্বীকার করে, বারবার মেয়ে সন্তান জন্ম নিলেও ছেলে সন্তানের মুখ দেখছিল না সে। আর তাই শাশুড়ির মাধ্যমে খবর পেয়ে ছেলে সন্তানের খায়েশ মেটাতে ওই নবজাতক শিশুটি চুরি করে। তাঁর দেওয়া তথ্যমতো পরে সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের নীলগঞ্জ বেত্রাহাটি গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাড়াইল থানায় মামলা রুজুর প্রস্তুতি চলছে।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নাজনীন আক্তার বলেন, শরীরে একটু সমস্যা দেখা দেওয়ার জুনাইদকে ওষুধ খাইয়ে রাত আনুমানিক ১টার দিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের সময় তাঁর ঘুম ভাঙলে কোলে এবং বিছানার আশপাশের কোথাও জুনাইদকে দেখতে না পেয়ে আঁতকে ওঠেন। পরিবারের অন্যদেরও সজাগ করে খোঁজাখুঁজি ও ডাকচিৎকার শুরু করেন। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায় ঘরের এক কোণে একটি সিঁধ। এ কথা বলতে বলতেই সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন নাজনীন। পরে বিড়বিড় করে বলেন, ‘তোমরা আমার জুনাইদকে এনে দাও।’
এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে তাড়াইল থানা-পুলিশ ও ডিবি পুলিশের দল। তাঁরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইমস অ্যান্ড অপসের সার্বক্ষণিক নির্দেশনায় অভিযান পরিচালনা করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাফল্যের মুখ দেখে। তারা প্রতিবেশী নারী সস্তু বেগম ও তাঁর মেয়ের জামাতা রুবেলকে গ্রেপ্তার করে তাদের হেফাজত থেকে চুরি যাওয়া দুই মাসের শিশু জুনাইদকে উদ্ধার করে।
চুরি যাওয়া শিশুটিকে কোলে ফিরে পেয়ে মা নাজনীন আক্তার বলেন, ‘আমার কলিজার ধন ফিরে পেয়েছি। বলতে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ সুপার স্যার সন্তানকে আমার কোলে তুলে দিয়েছেন।’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আল আমিন হোসাইন, ডিবির ওসি মো. আবুল বাশার প্রমুখ।