কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভাড়া বাসায় রিনা বেগম (৩৭) নামে এক নারী হোটেল শ্রমিককে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তারের পর আসামি আজমান হোসাইন শাকিল (২৩) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর দত্তের আদালতে এই স্বীকারোক্তি দেন তিনি। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত সোমবার হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার কালাউক গ্রাম থেকে অভিযান পরিচালনা করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। শাকিল ওই এলাকার জালাল মিয়ার ছেলে। অন্যদিকে নিহত রিনা বেগম শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার পশ্চিম টালকী এলাকার মৃত আবদুল জব্বারের মেয়ে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন মঙ্গলবার (২০ জুন) রাত ১২টার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শাকিলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, ভৈরব বাজার টিনপট্টি এলাকায় জুয়েল মিয়ার বাসায় হোটেল কর্মী রিনা বেগম দুই ছেলে মোজাম্মেল (১৭) ও রিয়াজ (২০) এবং কথিত স্বামী দুলালকে (৫৭) নিয়ে ভাড়া থাকতেন। ছয় মাস আগে রিনা বেগম ভৈরব বাজারে যে হোটেলে কাজ করতেন, সেই হোটেলেই বাবুর্চির কাজ নেন আজমাইন হোসাইন শাকিল নামের এক যুবক। একই হোটেলে কাজ করার সুবাদে শাকিলের সঙ্গে রিনা বেগমের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গড়ায় শারীরিক সম্পর্কেও।
গত ১৭ জুন রিনা বেগমের বাসায় আসেন শাকিল। এ সময় শাকিল রিনা বেগমকে বলেন, ‘কথিত স্বামী দুলালের জন্য তাঁর বিভিন্ন অসুবিধা হচ্ছে।’ এসব বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে রিনা বেগম শাকিলের ওপর রাগান্বিত হয়ে ঘরে থাকা একটি ইট দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করেন। শাকিল রিনা বেগমকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি শান্ত হননি।
একপর্যায়ে শাকিল পেছন দিক থেকে হাত দিয়ে রিনা বেগমের গলায় চেপে ধরলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য শাকিল রিনা বেগমের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গিঁট দেন। তারপর শাকিল নিহতের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও একটি এলইডি টিভি মনিটর নিয়ে চলে যান। যেন এলাকার লোকজন মনে করে ঘটনাটি চুরির এবং চুরির কাজে বাধা দেওয়ার কারণেই রিনা বেগম খুন হয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন আরও জানান, এ ঘটনায় রিনা বেগমের কথিত স্বামী তারই মামাতো ভাই দুলালকে ওই দিনই আটক করা হয়। দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে শাকিলের কথা জানা যায়। পরে তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাকিলের দেওয়া তথ্যমতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিহতের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও একটি এলইডি টিভি মনিটর উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা রূপবানু খাতুন বাদী হয়ে ভৈরব থানায় এজাহার দাখিল করলে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।