উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে টাঙ্গাইলে যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ভূঞাপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। তলিয়ে যাচ্ছে আমন ধান। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গেল ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটারে, ধলেশ্বরী নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও ঝিনাই নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জেলার ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া-চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় দেখা যায়, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই দুইটি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বসতভিটা ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মসজিদের একটি অংশও ভেঙে গেছে। স্থানীয় লোকজন ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া একই ইউনিয়নের ভালকুটিয়া-গোবিন্দাসী সড়কের কষ্টাপাড়া এলাকায় বন্যার পানির তীব্র স্রোতে পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। এতে করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। এতে বন্যার সময় সেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সপ্তাহখানেক ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে অর্ধশত পরিবার। ভেঙেছে মসজিদও।
ভালকুটিয়া গ্রামের আব্বাস প্রামাণিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন্যার পানিতে রোববার সকালে পাকা সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে কয়েক গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে গ্রামের একমাত্র মসজিদটি ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ দিকে পানি বৃদ্ধির ফলে ভূঞাপুরের যমুনার চরাঞ্চলসহ জেলার কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে অর্ধশতাধিক নতুন নতুন গ্রাম বন্যার কবলে পড়ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শতাধিক বসতভিটা, মসজিদ, বাঁধসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, `হঠাৎ করে যমুনা পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার চরাঞ্চল সহ নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় ধান, সবজি খেত ও বীজতলা সহ প্রায় ১০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শের পাশাপাশি প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করব।'
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, যমুনাসহ জেলার বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন গ্রামে। যেহেতু পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সেহেতু ভাঙন নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি কমে গেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, আজ থেকে বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও মেডিকেল টিম কাজ করছে।