গুড়, আচার ও মুরগির খাবারে (পোলট্রি ফিড) ভেজালের মাত্রা বেশি। সস, সয়াবিন তেল, দুধ, লবণ, মরিচ, হলুদগুঁড়াসহ বিভিন্ন পণ্যেও রয়েছে ভেজাল। বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হয় শাকসবজি ও ফলমূলে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সেমিনারে তুলে ধরা সমীক্ষায় এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৭ ধরনের পণ্য পরীক্ষা করে। এগুলোর মধ্যে ১৭ ধরনের নমুনায় ভেজাল শনাক্ত হয়েছে। গতকাল নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে এক সমীক্ষায় দেখানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গুড়ের ৭৪টি নমুনার মধ্যে ৫৩টিই মানবহির্ভূত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আচারের ১৫০টি নমুনার মধ্যে ৪৯টি, পোলট্রি ফিডের (মুরগির খাবার) ২১৫টি নমুনার মধ্যে ৩৭টি, সসের ১৫৪টির মধ্যে ৩২টি, সয়াবিন তেলের ৪৬টির মধ্যে ১১টি, দুধের ৪৭টির মধ্যে ১১টি, লবণের ১৪টির মধ্যে ৭টি এবং হলুদগুঁড়ার ৩৬টির মধ্যে ৬টি মানবহির্ভূত বা ভেজাল শনাক্ত হয়েছে। মধু, পানি, শুঁটকি, মরিচগুঁড়া, সরিষার তেল, কেক, ঘি, আর্টিফিশিয়াল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস এবং চিসপের নমুনায়ও ভেজাল শনাক্ত হয়।
সমীক্ষায় বলা হয়, এসব পণ্যের ৬৮টি প্যারামিটার পরীক্ষা করা হয়। এগুলোর মধ্যে ৩০টি প্যারামিটারই মানবহির্ভূত হয়। পরীক্ষিত প্যারামিটারের মধ্যে ৩০৭টি বেনজয়িক অ্যাসিডের মধ্যে মানবহির্ভূত পাওয়া গেছে ৬১টি, টোটাল সারফেস ৫৪টির মধ্যে ৫০টি, ৪৮টি ক্রোমিয়ামের মধ্যে ৩৬টি, ৯২টি পটাশিয়ামের মধ্যে ২৩টি, ৭৮টি হাইড্রোজের মধ্যে ১৬টি, ২২টি লেড ক্রোমেডের মধ্যে ৬টি, ১৪টি আয়োডিনের মধ্যে ৬টি, ১২টি ট্রান্স ফ্যাটের মধ্যে ৬টি মানবহির্ভূত পাওয়া গেছে।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দেশে শাকসবজি ও ফলমূলে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কৃষকেরা কীটনাশক ব্যবহারে সাধারণত নিয়মকানুন অনুসরণ করেন না। এ কারণে শাকসবজি ও ফলে কীটনাশকের উপস্থিতি বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত কোন খাদ্য কতটুকু নিরাপদ, তা জানা যায় না। তবে প্রত্যাশা হচ্ছে, সব ধরনের খাবারই নিরাপদ থাকতে হবে।
রুহুল আমিন বলেন, জাতিসংঘের এসডিজি গোল ২-এ খাদ্যনিরাপত্তা ও নিরাপদ খাবারের ব্যাপারে বলা আছে। দেশের মানুষের ফলমূল গ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রামের ২৩ দশমিক ৮ ও শহরের ৩৮ শতাংশ মানুষ ফল খায়। এটি বিভাগীয়ভাবে গ্রহণের ক্ষেত্রে বরিশালে ৪০ দশমিক ২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ৩, ঢাকায় ২৬ দশমিক ৫, খুলনায় ২৬ দশমিক ২, ময়মনসিংহে ৩৫ দশমিক ৮, রংপুরে ৬০ দশমিক ১ ও সিলেটে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ। গরুর মাংস ও পোলট্রি মাংস গ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষ ১৫ দশমিক ৭, শহুরে ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ, ডিম গ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষ ১০ দশমিক ১, শহুরে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
কীটনাশকের ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, সবজির কীটনাশক সরাতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে কিছুটা কমে। বেশি অনিরাপদ বা ক্ষতিকর খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে। খাদ্যের নিরাপদতা পরীক্ষায় বৈদেশিক অনুদানের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় আরও ৩টি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। ৩১৮টি পদে লোকবল নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে।