রাজধানীর খিলক্ষেতে পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির শিকার কিশোরের (১৬) শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে আজ বুধবার ভোরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ব্যাপক মারধরের কারণে তার পুরো শরীর ফুলে গেছে। অভিযুক্তকে বাঁচাতে গিয়ে আহত চার পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে শিশির কুমার ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ওই কিশোরের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে। তার মাথায় আঘাতের ফলে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই মুহূর্তে তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে রবিউলের বিরুদ্ধে মামলা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার। তবে অভিযুক্ত কিশোর গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছে, শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে তাকে মারধর করা হয়েছে এবং এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
হাসপাতালে আসা আহত কিশোরের মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মারধর করা হয়েছে। আমার একটা মাত্র ছেলে। আমি এটার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই।’
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত কিশোরের আনুমানিক বয়স ১৬ বছর। তবে তার পরিবার বলছে, কিশোরের বয়স ১১ বছর এবং সে স্যানিটারি মালামাল বিক্রির দোকানে কাজ করত।
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় দুটি মামলা করা হচ্ছে—একটি শিশু ধর্ষণের অভিযোগে, অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত কিশোর ও হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মোবারক হোসেন সজীব ও ইউসুফ আলী নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে গণপিটুনির ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার দুপুরে পাঁচ বছরের শিশুটি তার নানির বাড়িতে যায়। অভিযোগ রয়েছে, সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকার সময় এক কিশোর তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে। পরে শিশুটি নানির কাছে গেলেও নির্যাতনের বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি। শিশুটির পরিবার প্রথমে তাকে কয়েকটি হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে লোকলজ্জার ভয়ে শেষে তারা বাসায় ফিরে আসে। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়রা ট্রিপল নাইনে ফোন করে পুলিশ ডেকে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের চিকিৎসক ডা. সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
পুলিশ জানায়, খিলক্ষেতের মধ্যপাড়া এলাকায় ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে স্থানীয়রা মারধর করছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে খিলক্ষেত বাজার এলাকায় পৌঁছালে কয়েক শ স্থানীয় বাসিন্দা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং অভিযুক্ত কিশোরসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং অভিযুক্ত কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রিয়াজুল হক জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হবে। তবে তার আগে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয়। খিলক্ষেতের ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে আটক কিশোরকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনির ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে। আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।