ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ আনন্দমিছিল ও ঈদের জামাত বিপুল জনসমাগমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে লক্ষাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। ঈদের জামাতের পর এই মাঠ থেকেই শুরু হয় এক বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দমিছিল, যা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সকাল ৭টার আগে থেকেই দলে দলে মুসল্লিরা জামাতে অংশ নিতে আসেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই ৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের মূল প্যান্ডেল মুসল্লিতে পূর্ণ হয়ে যায়, ফলে প্যান্ডেলের বাইরেও হাজার হাজার মানুষ নামাজ আদায় করেন। ঈদের জামাতে ইমামতি করেন গোলাম মোস্তফা এবং বিকল্প ইমাম ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মুফতি জুবাইর আহমদ আল-আজহারী।
ডিএনসিসির উদ্যোগে আয়োজিত এই ঈদের জামাত সফল করতে ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। মুসল্লিদের অজু ও পানীয় জলের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করা হয়। নারীদের জন্য ছিল পৃথক নামাজের ব্যবস্থা। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ বরাদ্দ রাখা হয়। ১০০টি মাইকের মাধ্যমে পুরো জামাত এলাকার শব্দ সংযোগ নিশ্চিত করা হয় এবং পুরো মাঠ সিসিটিভির আওতায় এনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
ঈদের জামাত শেষে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে ঈদ আনন্দমিছিল শুরু হয়। ব্যান্ডদলের বাদ্যবাজনার তালে তালে আনন্দমুখর পরিবেশে হাজার হাজার মানুষ মিছিলে অংশ নেন। মিছিলের অগ্রভাগে ছিল সুসজ্জিত আটটি ঘোড়া, ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি এবং মোগল ও সুলতানি আমলের ইতিহাস সংবলিত ১০টি পাপেট শো। অংশগ্রহণকারীরা ‘ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক’ ধ্বনি দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। আনন্দমিছিলের মধ্য দিয়ে ঢাকাকে ন্যায্য ও পরিচ্ছন্ন নগরীতে রূপান্তরের বার্তা দেওয়া হয়।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে মিছিল শেষ হওয়ার পর একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিল্পীরা ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িতে গেলাম’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’সহ জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন। পাশাপাশি, আগত অতিথিদের সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তৃতার শুরুতে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদটাকে সত্যিকার অর্থেই ঈদ ঈদ মনে হচ্ছে। ঢাকার যে ঐতিহ্যবাহী ঈদের মিছিল, সেটা হয়তো কয়েক শ বছর পর আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে প্রতিবছর এভাবেই নগরবাসী এক হয়ে ঈদ উদ্যাপন করবে। এখন থেকে ঈদ উৎসব হবে আনন্দময়। ঘরে বসে টিভি দেখে সময় কাটাতে হবে না। সবাই একসঙ্গে ঈদ মিছিল করবে, মেলা উপভোগ করবে, সবাই একসঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেবে।’
ঈদ আনন্দমিছিলে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অংশগ্রহণ করেছে জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ঈদের আনন্দ সবার। ঈদের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, ঈদের নামাজের পর ঘরে ঢুকে যাওয়া এবং শুধু নিজেদের পরিবারকে সময় দেওয়া, সেটার পরিবর্তন দরকার। কারণ, ঈদ মানেই জমায়েত, সমাজের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা। তাই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে।’