পছন্দের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব না করায় শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনার মামলার আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জুলহাস মাদবর ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম মৃধাকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে দুপুরের দিকে উপজেলার ডামুড্যা বাজার এলাকা থেকে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে ডামুড্যা থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছেন মামলার অপর আসামি ডামুড্যা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি লিখন মাদবর।
গ্রেপ্তার জুলহাস মাদবর ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও শহিদুল ইসলাম মৃধা ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম মৃধা তার কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. নুসরাত তারিন তন্বীকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কিছুদিন পূর্বে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে শহিদুল ইসলামের বাগ্বিতণ্ডা হয়। বিষয়টি শহিদুল তার মামা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুলহাস মাদবরকে জানায়।
গত বুধবার রাতে ডামুড্যা বাজারের আলী আজম জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগী দেখে বাসায় ফিরছিলেন চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বী। বাসার কাছাকাছি পৌঁছলে জুলহাস মাদবর, জুলহাস মাদবরের ছেলে ডামুড্যা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি লিখন মাদবর, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম মৃধাসহ বেশ কয়েকজন মিলে চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বীর পথরোধ করে তার ওপর হামলা চালায়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নুসরাত তারিন তন্বী স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ডামুড্যা থানায় ওই তিন জনকে আসামি করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
দুপুরের দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জুলহাস মাদবর ও ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম মৃধাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
নারী চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম বারবার তার কোম্পানির ওষুধ লিখতে আমাকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। আমি তার দাবি না মানায় সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। গতকাল রাতে শহিদুল, স্থানীয় জুলহাস মাদবর, তার ছেলে লিখন মাদবরসহ বেশ কয়েকজন লোক আমার ওপর হামলা চালায়। তারা ধাতব পদার্থ দিয়ে আমার মুখে আঘাত করলে আমি জখম হই।
পরে আমার চিৎকার শুনে আমার মা আর স্বামী আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাদেরও মারধর করা হয়। আমি বর্তমানে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। আমরা সরকারি চাকরি করতে গিয়ে গ্রামে সেবা দিতে আসছি কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এমন বর্বরোচিত হামলা মেনে নেওয়া যায় না। আমি এর বিচার দাবি করছি।
নারী চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বীর স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘ওরা চাচ্ছিলো ওদের কিছু মানহীন ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে, কিন্তু একজন চিকিৎসক হিসেবে সব কোম্পানির ওষুধ ঢালাওভাবে লেখার সুযোগ নেই। তাই আমার স্ত্রী রাজি হয়নি।’
ওরা স্থানীয় আর প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কাল রাতে আমার স্ত্রী ও আমাদের ওপর হামলা চালায়। চিকিৎসকেরা চিকিৎসা সেবা দিতে গ্রামেগঞ্জে কাজ করে। এভাবে হামলা হলে কেউ আর চিকিৎসাসেবা দিতে এখানে আসবে না। আমরা এই ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
এ বিষয়ে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ল্যাবএইড ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহীদ ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক তন্বীর ওপরে হামলা চালিয়েছে। এতে তিনি এবং তার মা আহত হয়েছেন। তন্বীর মুখমণ্ডলে নীলা ফুলা ও জখমের আঘাত রয়েছে। বর্তমানে তারা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি কোম্পানির ওষুধ না লেখা নিয়ে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।’
এ বিষয়ে মামলা হলে অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। বাকি তদন্ত শেষ করে অতি দ্রুত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।